-->

সবজির দামও আকাশছোঁয়া 

নিজস্ব প্রতিবেদক
সবজির দামও আকাশছোঁয়া 

বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যারা দাম বাড়তি না। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তুলনামূলক কম দাম বলতে শুধু মাত্র পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আর বরবটি, টমেটো তো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া সেঞ্চুরি ক্রস করে ১২০-এ গাজর, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সব মিলিয়ে অন্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে সব সবজির দামও বলতে গেলে আকাশছোঁয়া। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি, ফলে সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

 

বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয় ৮০ টাকায়, যার মধ্যে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি পিস ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটোল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচাকলা প্রতি হালি (৪টি) ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মূলা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা আর কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর আগের আলু ৫০ টাকায়। অন্যদিকে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

 

এছাড়া ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হেলাল আহমেদ বলেন, মাছ-মাংসে তো আমরা সাধারণ ক্রেতারা হাত দিতেই ভয় পাই। এখন আবার সবজির দামও বাড়তি, বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আগে যে সবজি কিনেছি এক কেজি সেটা দামের কারণে বাধ্য হয়ে এখন আধা কেজি কিনি। সব ধরনের সবজির দাম যদি এত বাড়তি হয়, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা এগুলো কীভাবে কিনবে?

 

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে এসেছেন খোরশেদ আলম। তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর এত দাম বেড়েছে যে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য যেন কিছুই কেনার নেই। এমনকি সবজি কিনতে এসেও বিচার বিবেচনা করতে হয় কোন সবজিটা কিনব। সব সবজিগুলোরই বেশি দাম। বরবটি, করলা, বেগুন কিনতে যেয়ে দেখলাম বেশি দাম, তাই বাধ্য হয়ে তুলনামূলক কম দামি সবজি পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়া কিনলাম। অন্যদিকে এক ব্রয়লার ছাড়া অন্য সব কিছুর দামই বাড়তি।

 

যে কারণে মাছ-মাংস কেনাও যায় না। আগে তাও সবজির দাম কিছুটা কম ছিল, অন্তত সবজি কিনে খাওয়া যেত। এখন তো দাম বাড়তির কারণে সবজি কেনারও উপায় নেই। সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা হুমায়ন কবীর বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। এর মূল কারণ- এখন অনেক সবজির মৌসুম না, ফলে এগুলোর দাম বেশি। মূলত শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তিই থাকে। কারওয়ানবাজারসহ অন্য সব পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজিই প্রতি পাল্লায় দাম বেড়েছে।

 

সে কারণে আমাদের কেনার খরচ আগের চেয়ে বেশি লেগে যাচ্ছে। এরপর তা পরিবহনসহ শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, যেখানে দোকান বসাচ্ছি তার খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কারণে আমাদের মতো ছোট খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কমে গেছে। কারণ মানুষ কম সবজি কিনছে বেশি দামে। আগে একজন ক্রেতা যেখানে এক কেজি করে প্রতিটা সবজি নিতো, এখন অনেকেই নেয় আধা কেজি। ফলে আগে যেখানে এক পদের সবজি ২০ কেজি নিয়ে আসতাম, এখন নিয়ে আসি ১০ কেজি ৫ কেজি করে।

 

রামপুরা উলন রোডের বাসিন্দা আরিফুর রহমান। সকালে কাঁচাবাজারে যান তিনি। ঢ্যাঁড়শ কিনতে গিয়ে দেখেন প্রতি কেজির দাম ৬০ টাকা। অথচ বৃহস্পতিবার তিনি একই সবজি কেনেন ৫০ টাকায়। একইভাবে প্রতি আড়াইশো গ্রাম কাঁচামরিচের দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। হঠাৎ দাম বাড়ল কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল মিয়া নামে এক বিক্রেতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। তাই সবজি কম এসেছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে।

 

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ফসল রক্ষায় কৃষক ব্যস্ত। এ কারণে জোগান কম। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কারওয়ানবাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়, যা চলে মাঝরাত পর্যন্ত। বৃষ্টিতে বাজার এবং রাস্তায় পানি জমে থাকায় রাতেও কারওয়ানবাজারে বেচাকেনা কম হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে।

 

মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে অনেক সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। তাই কৃষকরা সবজি কম নিয়ে এসেছেন। আর সবজি কম পাওয়া গেলে দাম একটু বাড়েই। তিনি বলেন, বেশি দামে কেনা বলে সবজির দাম একটু বেশি রাখতেই হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

 

আবদুল আলিম নামে এক ক্রেতা বলেন, বৃষ্টি হোক বা যাই হোক, কোনো অজুহাত থাকলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর জন্য শুধু অজুহাত খোঁজে। বাজারে ইলিশ মাছের দামও বেশি। ৭০০ টাকার নিচে ছোট জাটকা ইলিশও কেনা যাচ্ছে না। ৮০০ গ্রাম সাইজের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। আর এক কেজি সাইজ বা তার থেকে বেশি হলে দাম পড়ছে ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা।

 

ইলিশের দাম বাড়ার প্রভাবে বাজারে অন্য মাছের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা। কারণ হিসেবে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণার পর দাম বেড়েছে এমনটি জানিয়েছেন ইলিশ ব্যবসায়ী জামিদুল হক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version