-->
শিরোনাম

হঠাৎ কেন বাড়ছে ভারী বর্ষণ?

শাহীন রহমান
হঠাৎ কেন বাড়ছে ভারী বর্ষণ?

শাহীন রহমান: আবহাওয়ার ধরন অনুযায়ী বর্ষা মৌসুমে দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি সময়ে বর্ষায় শুরুতে বৃষ্টিপাত না হলেও বিদায় বেলায় অঝোরে ঝড়ছে বৃষ্টিপাত। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এদিনে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে।

 

গত জুলাই মাসেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকা। দেখা দেয় বন্যা। শুধু এ বছর নয়। এর আগেও গত ২০১৭ সালে ৩ আগস্ট রাজধানীতে ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওই বছর ১২ জুন ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৈরী আবহাওয়ার কারণে সম্প্রতি বছর অতিভারী বর্ষণের পরিমাণ বাড়ছে। আর এর পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।

 

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এই সময় ভারী বৃষ্টির কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন লঘুচাপের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে একটি মৌসুমি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। লঘুচাপের কারণে প্রচুর জলীয়বাষ্প ঢুকেছে। ফলে সক্রিয় হয়েছে মৌসুমি বায়ু। আর এই কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত চলবে ভারী বৃষ্টিপাত। এরপর থেকে পরিস্থিতি উন্নত হতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন. দেশে বর্ষা মৌসুম জুনে শুরু হয়। থাকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে সেপ্টেম্বর মাস বিদায় নিতে চলেছে। শেষ সময়ে ভারী বর্ষণ ভাবিয়ে তুলছে বিশেষজ্ঞরদের। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের দেখা না মিললেও বর্ষায় বিদায় বেলায় অতিবৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মুলত বর্ষার এমন আচরণ।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের মোট বৃষ্টিপাতের ৭১ শতাংশই হয় বর্ষাকালে। বৃষ্টির পানি যেমন ফসলের জন্য অবদান রাখে, অন্যদিকে অতিভারী বর্ষণের কারণে জনজীবনে ভোগান্তিও আসে নিয়মিত। এই অতিভারী বর্ষণের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, এক দিনে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯ জুন ২০০১ সালে ৫৯০ মিলিমিটার। ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ ৩৪১ মিলিমিটার রেকর্ড হয়েছে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে। এ ধরনের অতিভারী বর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে আকস্মিক বন্যা যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি শহরাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ঢাকায় ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে। সেদিন দিনের প্রথম ভাগের মধ্যে ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ৩৩৩ মিলিমিটার। এরপর বেশ কবার ২০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের বৃষ্টিপাতের জন্য মূলত পশ্চিমা লঘুচাপ দায়ী। এর উৎপত্তিস্থল ভূমধ্যসাগর। পৃথিবীর ঊর্ধ্বাকাশের বাতাস পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। আর পশ্চিমা লঘুচাপগুলো বাতাসের দিক অনুসরণ করে ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্ব দিকে ধাবিত হয়। কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এই লঘুচাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফলে বৃষ্টিপাত, কুয়াশা ও উষ্ণ আবহাওয়ার জন্ম হয়।

 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা লঘুচাপের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলছে। এর ফলে আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠছে। তারা বলছেন বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে বাংলাদেশের তাপমাত্রাও বেড়ে চলছে। গত ১০০ বছরে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। আর আগামী ২১০০ সালে এটা বেড়ে দাঁড়াবে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করা অতি জরুরি।

 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে সাগরে লঘুচাপের কারণে দেশের আট বিভাগেই আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমেই কমে আসবে। তাপমাত্রাও বাড়বে। শনিবার সকাল নয়টার পর থেকে সারা দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়।

 

এতে উল্লেখ করা হয়েছে সোমবার পর্যন্ত কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মোংলায়, ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি মোংলায়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুর ও বান্দরবানে, ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া একই সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ডিমলায়।

 

এদিকে শনিবারও সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। কয়েক পশলা বৃষ্টিতে ভিজেছে মহানগর। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার ও সোমবার দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ সারা দেশেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই সময় ভারী বৃষ্টির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের পাশাপাশি একটি মৌসুমি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে।

 

লঘুচাপের কারণে প্রচুর জলীয়বাষ্প ঢুকেছে। ফলে সক্রিয় হয়েছে মৌসুমি বায়ু। আর এই কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version