-->
শিরোনাম
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন

ভোট সুষ্ঠু করতে গুরুত্ব বাড়ছে পোলিং এজেন্টদের

শাহীন রহমান
ভোট সুষ্ঠু করতে গুরুত্ব বাড়ছে পোলিং এজেন্টদের

শাহীন রহমান: ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে পোলিং এজেন্ট। এ কারণে নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় পোলিং এজেন্ট তার দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল থাকে না। ফলে এটা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা কী, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এখানেই থামছে না নির্বাচন কমিশন। তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে একাধিক কর্মশালারও আয়োজন করা হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকাকে স্পষ্ট করার জন্যই এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি। নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন, সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে আইন অনুযায়ী প্রতিটি ভোট কক্ষে তাদের একজন করে পোলিং এজেন্ট থাকবে। তারা ভোট কারচুপি, জালভোট রোধের বিষয়টি প্রার্থীর পক্ষ হয়ে দেখভাল করবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জাতীয় নির্বাচনে বিশাল সংখ্যার এই পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করলেও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নয়।

 

ফলে নির্বাচনে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। এ কারণে এবারই প্রথম বিশাল সংখ্যক পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানান তফসিল ঘোষণার পরই তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তার আগে দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে আরো একটি কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা এ বিষয়ে ধারণা দেবেন। আগামী ৪ আক্টোবর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এ বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে হবে এ কর্মশালা।

 

নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান এ বিষয়ে বলেন, অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ জনগণের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ মৌলিক মানবাধিকার। দীর্ঘসময় ধরে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় অনিয়ম ও কারচুপির বিভিন্ন মহলের অভিযোগসহ কালোটাকা ও পেশি শক্তির কারণে অবাধ ভোটাধিকার হরণ বা ব্যহত হয় বলে অধিকাংশদের ধারণা। এটা কখনো প্রত্যাশিত হতে পারে না। বিরূপ বাস্তবতাকে প্রতিহত করতে প্রার্থী তার স্বার্থে ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি বুথের জন্য একজন করে দক্ষ ও বিশ্বস্ত পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করে থাকেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে বৈঠকে মূল আলোচ্যবিষয়ের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা কী হতে পারে।

 

পোলিং এজেন্ট তার প্রার্থীর পক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী কীভাবে দায়িত্ব পালন করে পোলিংকে স্বচ্ছতার রূপ দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারেন। নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে কীভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়ে আনতে পারেন। এছাড়াও প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাকে দায়বদ্ধ করবেন এ বিষয়েও আলোচনা করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতকরণে প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকাকে স্পষ্ট করা এবং সর্বসাধারণ, বিশেষত সম্মানিত ভোটার সাধারণ, রাজনীতিবিদ ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী -প্রার্থীদের গণমাধ্যমের বদান্যতায় তা অবহিত করা।

 

আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। সময় ঘনিয়ে আসায় ইসিতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান এবারে মাঠ পর্যায়ে যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন এমন প্রায় ৯ লাখ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া যারা এসব প্রশিক্ষণ দেবেন তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আগেই শুরু হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো পোলিং এজেন্ট ও সাংবাদিক এমনকি পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন।

 

এই ধারাবাহিকতায় মাঠপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আগেভাগেই প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর অংশ হিসেবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করবে ইসি। ধাপে ধাপে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, ডিসি, পুলিশ সুপারদের এ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

ইসি কর্মকর্তা বলছেন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থক যারা পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরও এবার প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হিসেবে বলা হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা নিজ দলের পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় প্রশিক্ষণ দেবেন। এতে ভোটগ্রহণের দিন পোলিং এজেন্টরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়।

 

রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম এর আগে বলেন, রাজনৈতিক দলের মনোনীত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্বাচনে ভোট কক্ষে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিজ দায়িত্ব কী কী তা যাতে জানতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২২-এর দফা (১) এর বিধান অনুসারে প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার নির্বাচনী এজেন্ট ভোটগ্রহণের পূর্বে প্রত্যেক ভোটকক্ষের জন্য পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন। ওই এজেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত নোটিশ প্রিসাইডিং অফিসারের নিকট প্রেরণ করতে হবে। নিযুক্তকারী ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়পত্র না দেখালে প্রিসাইডিং অফিসার কোনো পোলিং এজেন্টকে গ্রহণ করবেন না। একটি ভোটকক্ষের জন্য একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ একজন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন।

 

নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৮, ২৯, ৩১, ৩৩ ও ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যথাক্রমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনী এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্টদের ভোট গ্রহণের শুরু থেকে ভোটকক্ষে ব্যালট বাক্সের ব্যবহার পদ্ধতি, ভোটকেন্দ্রে অবস্থান, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান পযের্বক্ষণ এবং প্রকৃত ভোটারদের শনাক্তকরণ, কোনো কোনো ভোটারের ভোটদানে আপত্তি উত্থাপন, ভোট গণনাসহ ফলাফলের বিবরণী ও অন্য প্যাকেট প্রস্তুত, ওই বিবরণী ও প্যাকেটে স্বাক্ষরদান, বিধি মোতাবেক কেন্দ্র থেকে ভোট গণনার সত্যায়িত অনুলিপি গ্রহণ ইত্যাদি দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

 

অনুচ্ছেদ ৩৭-এর অধীন বণির্ত রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ফলাফল একত্রীকরণের সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও নির্বাচনী এজেন্টদের উপস্থিতি প্রয়োজন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৩৬-এর (১১) দফার বিধান মতে যদি কোনো নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্ট ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাবের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করেন তবে প্রিসাইডিং অফিসার সেই এজেন্টকে সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান করবেন এবং অনুলিপি প্রাপ্তির রশিদ বা প্রাপ্তি স্বীকার গ্রহণ করবেন। এজেন্ট যদি প্রাপ্তি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তা লিপিবদ্ধ রাখতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version