-->
শিরোনাম

নিত্যপণ্যের বাজারে সবাই নাকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিত্যপণ্যের বাজারে সবাই নাকাল

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। প্রথমে এর আচ লেগেছিল নিম্নবিত্তদের। পরে তার তাপ লাগে মধ্যবিত্তদের গায়ে। এখন এসব পণ্যে কিনতে হিমশিম খাচ্ছে উচ্চবিত্তরাও। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত ফল পাচ্ছেন না কেউই। সবমিলে বাজারে খুব নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

 

আমরা মধ্যবিত্তরা বিপদে আছি, দিন দিন সবজির দাম বাড়ছেই। আগে আমরা মুলা খেতাম না, সেই মুলা নাকি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে কচুরমুখী এমনিতে পাওয়া যায়, সেই কচুরমুখী ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। সবজির বাজার গরিবের হাতের নাগালে আর নেই। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের বেতন বাড়ছে না।

 

কথাগুলো বলছিলেন শুক্রবার সকালে বাজার করতে আসা আঞ্জুমান আরা। আঞ্জুমান আরার এই ক্ষোভ-হতাশার কারণ ও কথার সত্যতা মেলে বাজারে একটু ঘুরলেই। কারণ, কাঁচা পেপে ছাড়া কোনো সবজির দাম এখন আর ৫০ টাকার নিচে নেই। আগাম শীতকালীন সবজিগুলোর দাম তো চড়া রয়েছেই।

 

শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা প্রতি পিস। সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও তা মানছেন না বিক্রেতারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে বাজার ঘুরে দেখা যায় ৪৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে আলু।

 

রাজধানীর রায়েরবাজার সিটি করপোরেশন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারে ফুলকপি-বাঁধাকপি ৬০ টাকা, শালগম ৮০ টাকা কেজি, গাজর ১২০ টাকা, শিম ২০০, বেগুন ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও শসা ৭০ টাকা এবং পেঁপে কেজিপ্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এ ছাড়া করলা ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুছড়া ১০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, পটোল ৭০ টাকা কেজি, লতি ৮০ টাকা কেজি, ঢ্যাঁড়শ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশপাশে সবজির বাজারগুলোতেও দামের একই চিত্র দেখা গেছে।

 

ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, এ সপ্তাহে দাম কিছুটা কমতে পারে। মফিজুল ইসলাম নামে একজন বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এখন পর্যন্ত সবজির দাম প্রায় একই রয়েছে। দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। আর সপ্তাহ তো মাত্র শুরু হলো, এখনই বলা যাবে না। শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। যেকোনো সবজির বাজারে এলে প্রথমে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। শিম ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, সময় গেলে এই শিমই ৫০ টাকায় বিক্রি করব।

 

ঝিগাতলা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোখলেচুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে ফুলকপি বিক্রি ছিল ৫০ টাকা, শুক্রবার ৬০ টাকা। মূলা আর শালগম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি গত সপ্তাহে ছিল, বর্তমানে ৮০, একই দাম।

 

সবজির দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শীতকালীন সবজি মৌসুম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি-বাদল। বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে পর্যাপ্ত আসছে না। তাই শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। সময় যতই বাড়বে কিছু সবজির দাম কমবে। তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকলে মানুষের জন্য ভালো হয়। আমরা সবজি বিক্রি করলেও আমাদের কিন্তু কিনে খেতে হয়। দাম বাড়লে আমাদের পুঁজিও বেশি লাগে।

 

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সেই ব্রয়লার এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। অন্যদিকে মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই অপরিবর্তত আছে।

 

শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ এর শাহআলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লেয়ার মুরগি ৩১৫ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবং দেশি মুরগি আগের মতোই ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রূপচাঁদা কেজি ১০৫০ টাকা, পাঙাশ ২৫০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৩৮০ টাকা, কাতল কেজি ৪৫০ টাকা, কই মাছ ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৮০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা এবং চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

মুরগির দাম বাড়ার প্রসঙ্গে মুরগি ব্যবসায়ী পাভেল হোসেন বলেন, মুরগির দাম প্রতিদিনই কমে-বাড়ে। পাইকারি বাজার থেকে একেক দিন একেক দর নির্ধারণ হয়। এর বেশি কিছু আমি জানি না। পাইকারি বাজার থেকে মুরগি কিনে এনে দোকানে বিক্রি করি।

 

বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তরা মুরগির মাংসটি বেশি কিনে থাকেন। যে মাংস একটা সময় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি ধরে পাওয়া যেত, সেটি এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এতে করে বেকায়দায় পড়েছেন ওইসব মানুষেরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version