-->
শিরোনাম

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন আজ

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে আজ। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন উপলক্ষে তৃতীয় টার্মিনালে মঞ্চ তৈরিরসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

 

আজ সকাল ১০টায় তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। পরে দুপুর ১২টায় বিমানবন্দর সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দুই অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘উদ্বোধনের দিন একটি উড়োজাহাজ তৃতীয় টার্মিনালের পার্কিং অ্যাপ্রোনে রাখা হবে। এখন ইকুইপমেন্টগুলো বসানোর কাজ চলছে। তবে সফট ওপেনিংয়ের পর এয়ারলাইনগুলো নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। আগামী বছরের শেষের দিকে যাত্রীরা টার্মিনালটি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবেন।

 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ (যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল নিয়োগ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) করা হবে উদ্বোধনের পর। পরে আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।

 

বেবিচক সূত্র জানান, এখন শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এর অ্যাপ্রোনে ২৯টি বিমান রাখা যায়। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অ্যাপ্রোনে আরও ৮ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে। ফলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। নতুন টার্মিনালে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি।

 

এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট।

 

২০১৭ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।বেবিচক জানায়, থার্ড টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে সুপরিসর ডিউটিফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে বছরে যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ।

 

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নান্দনিক নকশায় সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে মূল টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখন সেখানে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলছে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

 

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেয়ার সুযোগ আছে। আর তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

 

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেইট থাকবে। যেখানে যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করাতে পারবেন। তাদের আর ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে না। তবে নিজেরা করতে না চাইলে তাকে সহযোগিতা করতে ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারও প্রস্তুত থাকবে। সেখানে ইমিগ্রেশন করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

 

এ ছাড়া যেসব যাত্রী অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকবেন তাদের জন্য ৫টি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ৫৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কাউন্টার।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version