-->

সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ নির্বাচনের পথে ইসি

শাহীন রহমান
সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ নির্বাচনের পথে ইসি

শাহীন রহমান: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা-অনিশ্চয়তা কাটেনি এখনো। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই গঠিত হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যে সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 

সংবিধান অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এজন্য ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। ৩১ অক্টোবরই গঠন হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরিরবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেছেন, সংবিধান থেকে আমরা এক চুলও নড়ব না। এটা হলো আমাদের বার্তা। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ইলেকশন ফ্রি, ফেয়ার ও একসেপ্টেবল হবে।

 

সংবিধানের বিধান অনুসারে, বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া হলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।

 

সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করবে না। মূলত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। সরকারে কোনো পরিবর্তন না আনা হলেও এই সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো ভিন্ন ম্যাটার করবে না।

 

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক শরিক দলের নেতাকে ওই মন্ত্রিসভায় থাকার জন্য সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও সংসদে বর্তমানে জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এবং গণফোরামের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এদের সমন্বয়ে গঠন করা হতে পারে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার।

 

এদিকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পথে আগাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। ইতোমধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতির সব আনুষ্ঠানিকতাও তারা সম্পন্ন করেছে। যদিও এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা বাকি। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নবেম্বরের তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেসব দল নির্বাচনে আসবে তাদের নিয়েই ভোটের আয়োজন করবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি ভোটে না এলে নির্বাচনের পুরো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

 

এদিকে নভেম্বরের তফসিল ঘোষণার কথা ইসির পক্ষ থেকে বলা হলে জানা গেছে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের উদ্বোধনের সিডিউল থাকায় তফসিল ঘোষণা পেছানো হতে পারে। তফসিল একবার ঘোষণা করা হলে সরকার কোনো উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্প নিতে পারবে না। এই কারণেই কিছুটা তফসিল পিছিয়ে করা হচ্ছে।

 

জানা গেছে তফসিল ঘোষণার আগেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা এবং মেয়াদের শেষবেলায় নিজেদের আরেকটু গুছিয়ে নিতে চাইছে সরকার। সে জন্য তারা নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময় নিতে চায়। যদিও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা বা তারিখ চূড়ান্ত করার ক্ষমতা একমাত্র নির্বাচন কমিশনের। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজ করতে পারবে।

 

নির্বাচনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে এমন কোনো কাজ সরকার করতে পারবে না। যেমন এ সময়ে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন। চলতি অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর আরো দুটি মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন বাকি থাকবে। এ প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের তারিখ নভেম্বরের প্রথমার্ধে নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

ফলে সরকার মনে করছে, নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তাদের এই কাজগুলো করতে সুবিধা হয়।

 

এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপকরণ সংগ্রহের কার্যক্রম শেষের পথে। শিগগিরই এসব জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে কিছু ভোটের দিন সকালে, কিছু উপকরণ ভোটের আগের দিন নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোয় পাঠানো হবে।

 

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সব কেনাকাটা চলছে। অনেক মালামাল পেয়েও গেছি। কনাকাটার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশের বেশি অগ্রগতি হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হতে পারে। ব্যালট পেপার নিয়ে তিনি বলেন, ব্যালট পেপার বিজি প্রেস থেকে ছাপানো হবে। এছাড়া মনোনয়নপত্রসহ অন্যান্য মুদ্রণের কাজও করা হবে।

 

এজন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম সবদিক থেকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এখন কেবল তফসিল ঘোষণাই বাকি রয়েছে।

 

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এটা স্পষ্ট যে এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো এখানে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং কমিশন তা মনে করছে না। পরে যদি তেমন পরিস্থিতি উদ্ভব হয়, কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

 

এদিকে জানা গেছে নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা ইসি। এক্ষেত্রে সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলেছে সংস্থাটি। ইসির সেবা শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসি কাছে কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তুলে ধরা হয়। আলোচনার পর ওই বৈঠকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

 

নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী মালামাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, প্রতিটি জেলা নির্বাচন অফিস, প্রত্যেক উপজেলা নির্বাচন অফিস এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় থানা নির্বাচন অফিসে সংরক্ষণ করা হবে।

 

জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব অফিসের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনস্বার্থে ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের এই অফিসসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version