-->
শিরোনাম

রাজনৈতিক সমঝোতায় প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশনে

শাহীন রহমান
রাজনৈতিক সমঝোতায় প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশনে

শাহীন রহমান: দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অরিস্থিরতা ততই বাড়ছে। রাজনৈতিক সমঝোতা না থাকায় নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এই পেক্ষপটে আগামী নির্বাচন নিয়ে আরো মতামত জানতে আরো এক দফায় সংলাপের আয়োজন চলছে ইসি। গণ মাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সম্পাদকদের সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচন প্রস্তুতি পথে থাকায় ইসি কোনো রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করছে না। তবে তারা রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে তাকিয়ে আছে।

 

ইসি কর্মকর্তারা চানিয়েছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও তারা এখনো রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে তাকিয়ে আছে। জানা গেছে সমঝোতার মাধ্যমে দলগুলো যে সমাধান দেবে ইসি সেভাবেও নির্বাচন করতে প্রস্তুতি রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদিও সমঝোতা না হয় তাহলে ইসি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করবে।

 

সম্প্রতি সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যম সম্পাদকদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজনের কথা জানানো হয়েছে। ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন- গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসির পক্ষ থেকে ধারণাপত্রটিও পাঠানো হয়েছে। ৩৮ জন সম্পাদক ওই কর্মশালার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

ইসির ধারণাপত্রে আগামী নির্বাচন নিয়েও অনশ্চিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর নির্বাচনের যে অনুকূল পরিবেশের প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি এখনো হয়ে উঠেনি বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা হচ্ছে।

 

কিন্তু ওতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

 

এতে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথস্ক্রিয়া না হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। এমন অবস্থায় কমিশন মনে করে, ‘পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। নির্বাচন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা, চিন্তা চেতনা ও ভাবনার বিষয়গুলো কর্মশালায় উঠে এলে তা ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা হয়েছে ধারণাপত্রে।

 

আগামী ৩১ অক্টোবর গতি হবে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার। তার আগেই রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। ২৮ অক্টোবার বিএনপি সরকারের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। বিএনপি সমাবেশ প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে। ফলে রাজনৈতিক অস্তিরতার প্রভাব নির্বাচন কমিশনের উপর পড়ছে বলে মনে করছে ইসি। আর এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে আবারো সংলাপের আয়োজন করছে বলে জানা গেছে।

 

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার কার্যক্রমও শেষ ধাপে রয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রী মাঠপর্যায়ে যাওয়া শুরু করেছে। দিন যত যাচ্ছে কর্মযজ্ঞের পরিমাণ বাড়ছে। এরই মধ্যে বিবদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে সমঝোতা-সমাধানের আশায় তাকিয়ে রয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংবাদমাধ্যমের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ধারাবাহিক এই আলোচনায় জাতির কাছে তাদের প্রত্যাশার বিষয়গুলো উঠে আসবে।

 

ইসি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজ করা হবে, তার রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। লম্বা সময় রেখে তফসিল দেয়া হবে, নাকি ৪০-৪৫ দিন সময় দিয়ে তফসিল দেয়া হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

 

জানা গেছে প্রধান দুই দলের একটি নির্বাচনে না এলে সেই ভোট কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, না হবে; সেটা ইসি আর ভাবছে না। তারা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে মোটামুটি একটি ‘সুষ্ঠু’ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়। সে জন্য ভোটকেন্দ্রে চোখে পড়ার মতো ভোটার উপস্থিতি দরকার। তারা আশা করে, এই ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ভূমিকা রাখবে। এর বাইরে একটা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জন এবং প্রতিহত করার আন্দোলনে গেলে সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এমন আশঙ্কার বিষয়টিও ইসির বিবেচনায় আছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

 

এ ছাড়া প্রয়োজনে ভোটের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা আছে ইসির। তবে পরিবেশ যা-ই হোক নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে তারা এখনো অটল।

 

এছাড়া তারা রাজনৈতিক একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা আশা করছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা না হয় তবে নির্বাচনের পথেই আগাবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান তারা আশা করেন, হয়তো রাজনৈতিক সমঝোতা হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version