-->
শিরোনাম

ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ

শাহীন রহমান
ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ

শাহীন রহমান: গত মে মাসের ১৪ তারিখে দেশের দেশের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের দক্ষিণ উপকূলে প্রচন্ড বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। যার রেশ এখনো যায়নি। আবারো দেশের উপকূলে ঘনীভূত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজ সোমবারের রাতের মধ্যে সাগের সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। এটি তেদশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানিয়েছে তারা।

 

আরব সাগরেও গত শনিবার থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’ ধীরে ধীরে শক্তি অর্জন করছে। ওই ঝড়ের রেশে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত-বাংলাদেশের আকাশে মেঘের আনাগোনা বেড়ে গেছে। একটি ঘূর্ণিঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতে এবার বঙ্গোপসাগরও উত্তাল হয়ে ওঠেছে। সাগরের পশ্চিম-মধ্য এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি নিম্ন চাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘হামুন’।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আরো শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ত্রুটি কিছুটা বাক নিয়ে বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হবে। নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সোমবার থেকে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। মঙ্গলবার থেকে উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি রোববারের মধ্যেই নিম্নচাপের রূপ নিয়েছে। এটি আরো ঘনীভ‚ত হয়ে আজ রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। দেশের সুন্দরবন উপকূলে এটি আঘাত হানতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জানান আবহাওয়া অফিস থেকে ঘূর্ণিঝড়টি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

 

আবহাওয়া অফিস জানায় আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে একযোগে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি ঝরবে। বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রোববার দুপুরের দিকে রাজধানীতে একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। তা সামনে আরো বাড়তে পারে। নিম্নচাপের অগ্রভাগে থাকা মেঘমালা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে। এর ফলে আজ সোমবার থেকে উপকূলীয় জেলায় ভারীবৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগেও এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

 

ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আবহাওয়া অফিসের এক বিশেষ সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভ‚ত হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি রোববার সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে।

 

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলো।

 

চলতি বছরের মে মাসে প্রথম ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রভাব ফেলে। গত বছরও আরেকটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশে উঁচু জোয়ার ও জলোচ্ছাসের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে। ঘূর্ণিঝড় হামুন সৃষ্টি হলে এটি হবে বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা থেকে সাধারণত বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগরসহ বিশ্বের বিভিন্ন সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর আগাম নাম ঠিক করা হয়। ‘হামুন’ নামটি দিয়েছেন ইরানের আবহাওয়াবিদরা। পারসি শব্দ ‘হামুন’ মানে ছোট্ট দৈত্য। বিপর্যয় সৃষ্টিকারী শক্তি, মরুঝড় ও বড় বিপদের প্রতীকী অর্থেও ‘হামুন’ ব্যবহৃত হয়।

 

গত মে মাসে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোখা দেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতওয়ে বন্দরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। এটি ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের দ্বিতীয় নিম্নচাপ, প্রথম গভীর নিম্নচাপ, প্রথম ঘূর্ণিঝড়, প্রথম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় এবং প্রথম অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ছিল। নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে অগ্রসর হয় এবং অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সমান তীব্রতায় পৌঁছায়। ১৪ মে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version