-->
শিরোনাম

জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে দেশ

শাহীন রহমান
জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে দেশ

শাহীন রহমান: একই সময়ে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্টি হয়েছে দুটি ঘূণিঝড়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এর একটি দেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামের মাঝখান দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার বিকেল নাগাদ এটি দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। অপর ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’ সৃষ্টি হয়েছে আবর সাগরে। তা আরো ঘনীভূত হয়ে ইয়েমেন উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।

 

তবে তেজের সরাসরি প্রভাব দেশের উপকূলে না পড়লেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব দেশের ওপর পড়ছে। বিশেষ করে দুটি ঝড়ের প্রভাবে অধিমাত্রায় মেঘ ঢুকেছে। এর প্রভাবে ঝড় উপকূলে আঘাত হানার আগেই রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

 

এর আগে গত ২০১৮ সালেও একই ধরনের ঘটনা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা জানায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের খেপুপাড়া এবং চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী এলাকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তিন দিন থাকতে পারে। বুধবার বিকেল নাগাদ এটি দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। স্থলভাগে আঘাতের পর ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে ওই দিনই গভীর নিম্ন চাপে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরের ওপর তৈরি হয়েছে তেজ। রোববার এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ক্রমেই তা ওমানের দক্ষিণ এবং সংলগ্ন ইয়েমেন উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

 

এদিকে আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্ন চাপটি সামান্য উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রাতেই ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ কক্সবাজারকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেতের পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

সোমবার দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে ৭১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে গভীর নিম্ন চাপটি অবস্থান করছিল।

 

গভীর নিম্ন চাপটি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গভীর নিম্ন চাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত আছে। ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

এর নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরসহ গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার দুপুর থেকেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। আড়াইটার পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। তারা জানায় এই সপ্তাহজুড়ের বৃষ্টিপাতের প্রভাব থাকতে পারে।

 

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের সোমবার বেলা তিনটার মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে দ্বীপে মাইকিংক করা হচ্ছে। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ সেন্টমার্টিন পথে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ, স্পিড বোট, কাঠের বোট বা যেকোনো জলযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত সব পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনে মাইকিং করে দ্বীপের সবাইকে সতর্ক করা হয়।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূইয়া জানান, তিনটি পর্যটকবাহী জাহাজে করে ১ হাজার ১৫০জন পর্যটক সোমবার সকালে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছান। ওই জাহাজেই তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।

 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদ ও বিচকর্মীদের সমন্বয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে মাইকিং করার পাশাপাশি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে নির্দেশনা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি জানান রোববার থেকে সেন্টমার্টিনে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া এখন একধরনের গুমোট হয়ে আছে। সাগর ধীরে ধীরে উত্তাল হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version