নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্যের কারণে এমনিতেই সবার অবস্থা করুণ। এরসঙ্গে সম্প্রতি সবজির বাজার আরো গরম হয়ে ওঠেছে। যদিও আগেই থেকেই দর বাড়তি ছিল এখন নতুন করে আবারো বাড়ায় ক্রেতাদের জন্য মড়ার পড়ে খাড়ার ঘা হওয়ার অবস্থা। ঢাকাসহ সারা দেশের একই অবস্থা।
সাধারণ ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, ‘সবজি বাজারে যখন আসি তখন মনে হয়, না আসলেই ভালো ছিল। সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আগে এক কেজি কিনতাম, এখন তার অর্ধেক পরিমাণও কিনতে কষ্ট হয়।’
এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন ফেনীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রফিকুল আলম। একইভাবে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা।
এদিকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন পাইকারদের, আর পাইকাররা দেখাচ্ছেন নানা অজুহাত। ফেনী শহরের বড় বাজার, পৌর হকার্স মার্কেট, দাউদপুর তরকারি আড়ত ও মুক্ত বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা ৯০, চিচিঙ্গা ৮০, শসা ৬০, ঢেঁড়স ৭০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকায়, ধুন্দুল ৮০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকায়, বরবটি ১০০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, জালি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কেজি প্রতি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি উঠলেও দাম এখনো নাগালের বাইরে। বাজারে শিম ১৭০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি গাজর ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে মাছ, মাংস ও ডিমের দামও ঊর্ধ্বগতি। গরুর মাংস মানভেদে কেজি প্রতি ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ, মৃগেল ২৮০ থেকে ৪০০, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২৪০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২১৫ ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৭৫ টাকা।
ফেনীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আবুল হোসেন নামে এক শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে ভালো হতো যদি না খেয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু না খেয়ে তো থাকতে পারি না। চাহিদা বেশি থাকলেও বাজারে গিয়ে অল্প কিছু পণ্য নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। পরিবারে আগের চেয়ে দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের পরিমাণও কমিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি।
আবদুল্লাহ নামে আরেকজন বলেন, দাম বৃদ্ধিতে হাতের নাগালের বাইরে সাধারণের বাজার দর। এখন তো সারাবছরই দাম বেশি। আমরা নিরুপায় হয়ে অল্প কিছু পণ্য নিয়ে বাজার থেকে ফিরছি। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে কারো মাথাব্যথা নেই। যে যেভাবে পারছে দাম নির্ধারণ করতেছে।
দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে মাজহারুল হক জিসান নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, আগে আমরা মধ্যবিত্তরা কিছু না খেলেও ডিম, আলু, ডাল দিয়ে কোনোমতে দুবেলা খেতে পারতাম। এখন এক কেজি আলু ৫০ টাকা, একটি ডিম ১৩ টাকা। দাম বাড়লেও আয় আগের মতোই স্থির আছে। আমাদের সীমিত আয়ে সংসার চালোনো বেশি কষ্টকর। মাস শেষে এখন সঞ্চয় দূরের কথা, ধারদেনা করে চলতেও কষ্ট হয়।
আহমেদ রুবেল নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, সামাজিক অবস্থানের কারণে কোথাও চাইতেও পারি না। প্রাইভেট পড়িয়ে মাস শেষে যে পরিমাণ টাকা পাচ্ছি তা দিয়ে মাসের অর্ধেক চলতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আজিজুল হক নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে মাল পাওয়া যায় না। আমরা কেনা দামের ওপর নির্ভর করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করি। আহামরি লাভ করি এমনও না।
ফেনী বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, জেলা পর্যায়ে আমাদের করার তেমন কিছু নেই। কেনার ওপর আর দেশীয় বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে আমরা দাম নির্ধারণ করি।
বাজারদর আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন দাউদপুর তরকারি আড়তের ব্যবসায়ী আদিত্য কর্মকার। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে আগামী কয়েকদিন আবার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। টানা বৃষ্টি হলে সবজির দাম আরো বাড়তে পারে।
অন্যদিকে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরের দাবি বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তারা। ফেনী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অ.দা.) মো. কাউছার মিয়া জানান, দ্রব্যমূল্য যেন ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে, কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য