শাহীন রহমান: সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়কে নির্বাচনকালীন সময় হিসেবে গণ্য করা হবে। এই সময়ে মধ্যে সংসদের কোনো অধিবেশন হবে না। হিসাব অনুযায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ইসি নিলেও আজ থেকে শুরু হয়েছে নির্বাচনী ক্ষণগণনা।
এদিকে নির্বাচনী ক্ষণগণনা শুরু হওয়ায় ইসির প্রস্তুতিও জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় ডেকেছে ইসি। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ সূচি রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৫ নভেম্বরের মধ্যে এ সাক্ষাৎ করতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে জানা গেছে নবেম্বরের মাঝা-মাঝি সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। যদিও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছিল ইসি। সূত্র জানায় মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রকল্প উদ্বোধনের কোনো নিয়ম নেই। এ কারণে তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে নভেম্বরের মাঝা-মাঝি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি বর্তমানে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। জানা গেছে তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ‘কমিশন সভা’ করবে ইসি। ওই সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হতে পারে। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ ধরনের সাক্ষাতের রেওয়াজ রয়েছে।
এদিকে সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ভোটে কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকটি নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে ওইদিন বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিবকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের করণীয় নির্ধারণ এবং সমন্বয় সহজীকরণের লক্ষ্যে আগামী ১ নভেম্বর বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সভায় নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন। সভায় যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
এদিকে নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে তারা হরতাল পালন করেছে। চলছে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি। এর মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাঁস প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনরার কাজী হাবিবুল আউয়াল মার্কি রাষ্ট্রদূত পিটার হাঁসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হাতে অন্য কোনো অপশন নেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে অনেক অপশন থাকে। তারা এককভাবে বা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। কিন্তু কমিশনের হাতে এ ধরনের কোনো অপশন নেই। কমিশন নির্বাচনের জন্য দৃঢভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য