-->

সফলতা নিয়ে সংশয়

শাহীন রহমান
সফলতা নিয়ে সংশয়

শাহীন রহমান: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলগুলোর সঙ্গে আজ ফের সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের এই সংলাপের জন্য ৪৪টি দলের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। একদিনেই সবগুলো দলের সঙ্গে ইসির এই সংলাপের আয়োজন। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ কতটা সফল হবে।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে একদিনের সব দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। এই সংলাপে কোনো ভালো ফল বয়ে আসবে না। এছাড়াও সংলাপে বিএনপিসহ সব দল উপস্থিত না হলে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

 

ইতোমধ্যে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা আত্মগোপনে। বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে তালা। চলছে পুলিশ প্রহরা। এ অবস্থায় ইসির পক্ষ থেকে দেয়া চিঠি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চিঠি কেউ গ্রহণ করেনি। ফলে বিএনপির পক্ষ থেকে এই সংলাপে উপস্থিত থাকা একেবারের অসম্ভব কল্পনা। এছাড়া দলটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে কর্মসূচি পালন করে আসছে। রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়েছে। বিএনপির দাবির মধ্যে বর্তমান ইসির পদত্যাগের বিষয়টি রয়েছে।

 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি ও সমমনা দল এই সংলাপে অংশ নেবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ‘সংলাপে কে অংশ নেবে? বিএনপি নেতারা হয় কারাগারে অথবা পলাতক। যদি আপনার হাত-পা বাঁধা থাকে এবং ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়, তাহলে আপনি কি খেতে পারবেন? এই নির্বাচন কমিশন কি শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে যেতে পারবে?

 

তিনি বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। সব নেতার নামে মামলা। মিথ্যা মামলায় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এমন অবস্থায় নেতাদের জেলে রেখে কে বসবে সংলাপে?’

 

অপর দিকে বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর এই সংলাপে বর্জনের আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়াও ইসলামপন্থি দলগুলো যারা বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে তারা সংলাপ বর্জন করতে পারে বলে জানা গেছে। ইসলামী আন্দোল বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা ইসির সংলাপে যাবে না। দলটি এর আগে সবকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর থেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসছে। তারাও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

 

এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা কারাগারে। তাই সংলাপ কার সঙ্গে হবে? আর আমরা নির্বাচন কমিশন বাতিল চাই। তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ। তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপে যাব না।

 

তবে জানা গেছে, এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করবে। সংলাপ নিয়ে বিভক্ত ইসলামী দলগুলো। এ ছাড়া কিছু রাজনৈতিক দল এখনো রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়। নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংলাপ নিয়ে তাদের এমন অবস্থানের বিষয়টি জানা গেছে।

 

এ অবস্থায় ইসির এই সংলাপ কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন একটি অর্থবহ সংলাপে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়টি ইসিকে নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীন ও সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে ইসি সরকারকে বলতে পারে, সরকার যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের সংলাপের খেলা, সত্যিকারের সংলাপ নয়। এটা শুধুই লোক দেখানো। ইসির একার পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব না। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয় এমন নির্বাচন ঠেকাতে তারা পারবে। সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ইসির ব্যর্থতার সমালোচনাও করেন বদিউল আলম মজুমদার।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আজ শনিবার এই সংলাপের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই সংলাপ। নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। দলগুলোর কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ হবে।

 

ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, দুই ভাগে ইসির সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের জন্য দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা তাদের নির্ধারণ করা দুজন প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগসহ ২২ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবে তারা। বিকেল ৩টায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ আরো ২২ দলের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

 

তবে বিশ্লেষক এই সংলাপকে লোক দেখানোও মনে করছেন। তারা বলছে ইসির একদিনে ৪৪ দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই হতে নয়। এই সংলাপে কথা বলার জন্য দলগুলো সময় পাবে না। এক দুই মিনিটে তারা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারবে না।

 

‘৪৪টি রাজনৈতিক দলের ৪৪ জন প্রতিনিধি যদি ১০ মিনিট কথা বলেন, তাহলে কত সময় লাগবে? সংলাপের সময় যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তি থাকতেই পারে। এত সীমিত সময়ের মধ্যে এতগুলো দলের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ কি সম্ভব?’ এই সংলাপ কোনো ফল বয়ে আনবে না এবং অর্থবহও হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। তখন বিএনপিসহ ৯টি দল নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। তারা বলেছিল, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইসির সংলাপের চিঠি পেয়েছেন।

 

তিনি বলেন, ইসির সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কারণ, যাওয়াটা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার একটা ছায়া আমরা দেখছি। দেশের প্রধানতম বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে এই সংলাপে গিয়ে তো লাভ নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version