-->
শিরোনাম

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাচ্ছে জেলা প্রশাসকরাই

শাহীন রহমান
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাচ্ছে জেলা প্রশাসকরাই

শাহীন রহমান: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে দু' একদিনের মধ্যে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে এবার ৩শ আসনের নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাচ্ছেন। ইসির মনে করছে প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে তাদের পক্ষেই সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ডিসি এসপিরা সমন্বয় করে নির্বাচনের মতো জাতীয গুরুদায়িত্ব পালনের সক্ষম হবে।

 

এদিকে দিনক্ষণ চূড়ান্ত না করা হলেও দুএকদিনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। তফসিলের আগে শেষ প্রস্তুতি হিসেবে রোববার নির্বাচনী অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে এই অ্যাপসের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। ঝামেলা এড়াতে প্রার্থী এই অ্যাপস ব্যবহার করেই তার মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। এছাড়া একজন ভোটার তার ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন। নির্বাচনের দিনের যাবতীয় তথ্য ছাড়াও আগে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনের তথ্যই অ্যাপসের থাকছে। যে কেউ স্মার্ট ফোনে এই অ্যাপস ডাউনলোড করেই সার্বক্ষণিক নির্বাচনী তথ্য জানতে পারবেন।

 

বেলা ১১টায় আগার গাঁও নির্বাচন ভবনের এই অ্যাপসের উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় তিনি বলেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলে নির্বাচনী ‘বিধি ভঙ্গের সংস্কৃতি ও অনাচার’ দুটোই কমে আসবে। একই সঙ্গে ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করে প্রার্থী ও ভোটারদের অনলাইন পদ্ধতি ও অ্যাপ ব্যবহারের আহব্বান জানিয়েছেন সিইসি।

 

বলেন, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘাতের নানা ঘটনা ঘটে, এই অ্যাপ ব্যবহারের ফলে সেটি কমে আসবে। মননোয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে শো ডাউন করা হয়। এই শো ডাউন কালচার বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সংস্কৃতি কিন্তু এখানে সংকটও হয়ে থাকে। এই সংকটে নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্ত হন। সাবমিশন করার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহার করার জন্য। এই যে অনাচারগুলো হয়, অনলাইন সিস্টেমে অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। অনলাইন সাবমিশনের ফলে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন অ্যাপটির মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসে তার ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি তার ভোটার এলাকা, নির্বাচনী আসন, ভোটকেন্দ্রের নাম জানা যাবে। এতে ভোটকেন্দ্রের ছবি, ভোটকেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান ম্যাপসহ দেখা যাবে। এর মাধ্যমে বিভাগওয়ারী আসনগুলোর তথ্য, যেমন : মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্যও (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) থাকবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলি নোটিস আকারে প্রদর্শিত হবে। নির্বাচনের দিন প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের তথ্য এবং শেষ পর্যন্ত কত ভোট পড়ল, সেই তথ্যও অ্যাপে থাকবে। নির্বাচনী ফলাফলের সার্বিক অবস্থা, যেমন গণনা এবং ফলাফল বিশ্লেষণ নামে অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার আগের নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের ‘গ্রাফিক্যাল বর্ণনাও পাবেন।

 

ইসি কর্মকর্তারা নির্বাচনের শেষ প্রস্তুতি হিসেবে অ্যাপসের উদ্বোধনের পর এখন তফসিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও কবে তফসিল হবে এবিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই একদিনের মধ্যেই তফসিলের প্রস্তুতি রয়েছে। টিভি ভাষণে সিইসি তফসিল ঘোষণা করবেন। তবে তফসিলের আগে পরেই প্রধান কাজ হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। একটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালানার জন্য সার্বিক দায়িত্ব থাকে এই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হাতে। ফলে এবারও ডিসিদেরই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়েগের প্রক্রিয়া চলছে।

 

জানা গেছে তিনশ; আসনের জন্য ৬৪ জেলার ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে প্রতি আসনের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন একজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মুলত এই দায়িত্বে থাকবেন। এরবাইরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও কোন কোন ক্ষেত্রে এই দায়িত্বে নিয়োগ করা হতেহ পারে বলে জানা গেছে।

 

গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ইসি ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ রিটার্নিং কর্মকর্তা যেমন নিয়োগ করতে পারে, তেমনি একজনকে দুই বা ততোধিক আসনের জন্যও নিয়োগ করতে পারে। তবে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।

 

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, জেলা প্রশাসকের হাতে থাকে মাঠের সব ক্ষমতা, যা অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা পান না। তাই তাদের জন্য নির্বাচন তুলে আনা যতটা সহজ, অন্যদের ক্ষেত্রে ততটাই কঠিন।

 

এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেছিল কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সে সময় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও দুজন বিভাগীয় কমিশনারকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন মোট ৫৮১ জন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪৯২ জন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২৩ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১০, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আটজন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তিনজন, আইন কর্মকর্তা একজন।

 

আর বাকিদের সরকারের অন্যান্য দপ্তর থেকে নিয়োগ দিয়েছিল ইসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র হলো ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে, যাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আগামী ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করতে চায় ইসি।

 

ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়েছে কমিশন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রেকর্ড করা হতে পারে সিইসির জাতির উদ্দেশে ভাষণ, যেখানে থাকবে ভোটের তফসিলও।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version