শাহীন রহমান: তফসিল ঘোষণা নিয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে জানা গেছে বিকাল ৫টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতবে। বৈঠকের পর এদিন সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। জানা গেছে ৭টায় জাতীর উদ্দেশে দেয়া টিভি ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হজাবিবুল আউয়াল এই তফসিলের ঘোষণা দেবেন।
তবে আজ তফসিল ঘোষণা নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন নির্বাচনের তফসিল কখন ঘোষণা করা হবে ১০টায় প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে। তফসিল ঘোষণার জন্য সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারাই দেখবে। কমিশন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি ইসিতে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইসি ভবনের সামনে চার টিমের পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশি টহলও বাড়ানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশের গাড়ি নির্বাচন কমিশনের সামনে দিয়ে টহল দিচ্ছে। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন।
এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যায় ওই ভাষণ প্রচার করা হয়। ওই ভাষণেই মূলত তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসি সূত্র জানায়, আজ বিকেলে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। প্রথা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে ভাষণের মাধ্যমে জাতির কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সূচি তুলে ধরেন। সে জন্য তফসিল ঘোষণার দিন নির্বাচন ভবনে ভাষণ রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিতে বিটিভিকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসির তরফ থেকে। তফসিল ঘোষণার দিন তাৎক্ষণিক কমিশন সভার নোটিশ ও বিটিভির চিঠি জারি করার মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো বৈরী অবস্থানে রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপির। অপর দিকে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে সর্বাদ্মক পট্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই অবস্থায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহব্বান জানিয়েছে চিঠি দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ক্ষমতাসীন দল বিএনপি জাতীয় পার্টি ও আন্দোলনে থাকা বিএনপি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনটি দলকে শর্তহীন আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই চিঠি তফসিল ঘোষণা কোনো প্রভাব ফেরবে না মনে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর।
চিঠির বিষয়ে ইসি অবগত নয় উল্লেখ করে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ডোনাল্ড লুর চিঠি তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে। চিঠিটি সংলাপের আহব্বান জানিয়ে কি না, সেটা কমিশন অবহিত নয়। কারণ, চিঠি কমিশনের কাছে আসেনি। কখন, কীভাবে তফসিল ঘোষণা হবে, তা আজ সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের জানানো হবে। তিনি বলেন চিঠি কমিশনের কাছে আসেনি। কমিশন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার আলোকে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।
ইসি সচিব তফসিল ঘোষণার বিষয়ে বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ৭০ (১৯৭০ সাল) পরবর্তী সময়ে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচনের তফসিল হয়েছে, সিইসি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জাতিকে অবহিত করেছেন। এবারও সেই রেওয়াজ অব্যাহত থাকবে।
গত ৯ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনুমতি নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রুত সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া তফসিল ইস্যুতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন সিইসি। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। তাই সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। পরবর্তী সংসদের জন্য ভোটগ্রহণ করতে হবে তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে।
অর্থাৎ গত ১ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। আর ২৯ জানুয়ারির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনসম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য