-->
শিরোনাম

তফসিল ঘোষণায় নিরাপত্তা জোরদার

ইমরান খান
তফসিল ঘোষণায় নিরাপত্তা জোরদার

ইমরান খান: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের ডাকা পঞ্চম দফার অবরোধের প্রথম দিনেই বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্যেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই ভাষণেই ঘোষণা করেন তফসিল।

 

ঘোষণার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধিসহ সহিংসতা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি। রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আগুন-সন্ত্রাস ঠেকাতে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে প্রধান সড়কগুলোতে নজরদারি করছে পুলিশ।

 

এদিকে একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অভিমুখে গণমিছিল শুরু করেছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কিন্তু রাজধানীর শন্তিনগরে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে দলটির নেতাকর্মীরা। পরে সেখানেই কর্মসূচি বন্ধ করে দেন তারা। বুধবার বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে এই গণমিছিল শুরু হয়। এর আগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জমায়েত হন দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর সেখান থেকে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল শুরু করেন তারা। তবে রাজধানীর মালিবাগ শান্তিনগর মোড়ে পুলিশ প্রস্তুত ছিল আগে থেকেই। সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া হয় গণমিছিল।

 

একইদিন বিএনপি-জামায়াতের ডাকা পঞ্চম ধাপের প্রথম দিনের অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বাংলামটর থেকে শাহবাগ অভিমুখে মিছিল করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। অবরোধ কর্মসূচি পালনে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের শেষদিকে ছাত্রলীগ ও পুলিশ লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে।

 

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতিরঝিল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মীম ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহব্বায়ক জিয়াউল হক জিয়াকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে। তিনি বলেন, তাদেরকে নির্যাতনের পর রমনা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ছাত্রলীগ।

 

এছাড়া জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকতে ও জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশের সব বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানে থাকার খবর পাওয়া গেছে। তবে বুধবার দুপুর দেড়টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার সময় থেকে পুলিশের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সারা দেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার সকালে সরেজমিন রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাইরে জলকামানসহ আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) কার দেখা গেছে।

 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশন ভবনের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। সেখানে পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সড়কে টহল দিচ্ছে র‌্যাব ও বিজিবি। তৎপর আনসার সদস্যরাও।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। রাজনৈতিক কার্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ঘিরেও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

এদিকে এই তফসিল ঘোষণাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে দেখলেও রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ইসি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়ার কথাও। যদিও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পঞ্চম দফায় শুরু হয়েছে বিএনপির ডাকা অবরোধ।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, তফসিলের পর ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর ওপরে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকার ভেতরে এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে আগুন দেয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। এ জন্য আইনানুগভাবে সবকিছুই করা হবে।

 

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করছে কি না তা শনাক্তে র‌্যাবের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের আশপাশের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশেই বিশেষ টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version