-->
শিরোনাম

সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম কমার সুখবর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম কমার সুখবর নেই

শীতের আগাম সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম কমার তেমন সুখবর নেই। কিছু সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও বেশিরভাগ সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই চড়া শাকসবজি ও মাছের বাজার। অপরিবর্তিত রয়েছে তেল, ডিম, লেয়ার-কক মুরগি, হাঁস, গরু ও খাসির মাংসের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা স্বস্তি এসেছে ব্রয়লার মুরগি, আলু আর পেঁয়াজের দামে। তবে বেড়েছে মসুর ডালের দাম।

 

সরেজমিনে কাঁচা বাজারে সবজির দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটোল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, ঢেঁড়শ, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সবধরনের শাকসবজির বাজার আগের মতোই চড়া। ৫০-৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। ঢেঁড়শ, পটোল, ঝিঙ্গা, করলা, চিচিঙ্গা ৭০-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, কাঁচাকলা হালিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়াও পুরান আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। দেশি ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ ও ৯৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৩০ ও ১০০ টাকায়। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। দেশি রসুনের কেজি ২২০ যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ টাকা। ইন্ডিয়ান রসুন ১৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। আর অপরিবর্তিত রয়েছে শুকনা লাল মরিচের দাম। গত সপ্তাহের মতোই ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

 

মুদিপণ্যের মধ্যে দেশি মসুর ডাল, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ ও ১২৫ টাকায়, যার দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা এবং ১১৫ টাকা। অ্যাংকর ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, ডাবলি ৬৮ টাকা, খোলা চিনিগুড়া চাল ১৩৫ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৮, নাজিরশাইল ৭৫, মোটা চাল ৫৪ টাকা, গুঁড়াদুধ ৭৮০ টাকা, তেল ১৭০ লিটার, ৫ কেজির বোতল রূপচাঁদা ৮০০ টাকা, পামঅয়েল ১৩৫ কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই সবকিছু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাবে খুচরা বাজারেও দাম চড়া।

 

শামীম হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, সবজি কিনতে গেলেই সব টাকা ফুরিয়ে যায়। এত দাম দিয়ে কেনাকাটা করা যায় নাকি। এক কেজি শসা কিনতে গেলেও ৭০ টাকা লাগে। আরও অন্যান্য সবজির দাম তো আছেই। বাজারে শিম-ফুলকপি প্রচুর পরিমাণে আসছে কিন্তু শিমের দাম ৯০-১০০ টাকা। আর ছোট ফুলকপিও ৬০-৭০ টাকা দাম চায়। এমন হলে কীভাবে চলবে। অন্তত গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও দাম কিছু টাকা কমানো উচিত।

 

বনলতা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আরিফ রব্বানী বলেন, শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্রেতা কম। শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে সকাল থেকে যে পরিমাণ মানুষ আসতো তেমনটি নেই। বৃষ্টিতে সবজির দাম আরও বেড়েছে। এখন শীতের সবজি বড় হওয়ার সময়। এই বৃষ্টি থাকলে সেগুলো নষ্ট হবে। আর অবরোধের কারণে পরিবহন খরচতো বেড়েছেই।

 

এদিকে নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার সংলগ্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৩০০-৩৫০, মাঝারি রুই ২৫০-২৭০, কাতলা ৩০০-৩৫০, বড় পাঙাশ ২০০-৩০০, পাবদা ৫০০-৬০০, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ ও শিং মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট, মাঝারি, বড় ইলিশ মাছ যথাক্রমে ৯০০, ১২০০ ও ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ছোট কাচকি মাছ ৩০০ টাকা, মলা মাছ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছের দামও বেশ চড়া। প্রতি কেজি বড় সাইজের সুরমা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, রূপচাঁদা আকারভেদে ৫০০-৮০০ টাকা, লাল কোরাল ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

 

মাংসের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ২০-৩০ টাকা। ব্রয়লারের কেজি ২১০-২২০ টাকা থেকে কমে দাম হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়। কক মুরগি ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ টাকা কেজি এবং হাঁস ৬০০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, গরু ও খাশির মাংসের দামও। লাল ডিম ৫০ টাকা, সাদা ডিম ৪৮ টাকা, হাঁসের ডিম ৮০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

 

গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা ও খাশির মাংস ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। সঙ্গে পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি কমেছে ১০ টাকা। তবে আগে থেকে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি চড়া থাকায় নতুন দামে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ক্রেতারা।

 

অন্যদিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চালের দাম। আলুর দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে আবার বেড়েছে। আর নতুন করে আরও কিছুটা বেড়ে চিনির দাম কেজিতে দেড়শো টাকা ছুঁয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে প্রায় দুই টাকা। সঙ্গে এতোটা না বাড়লেও মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমায় বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ছে। যদিও তথ্য বলছে, সরকারের গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। যে কারণে পাইকারি বাজারে একপক্ষের অভিযোগ- মিলারদের কারসাজির কারণেই মূলত চালের    দামে উল্লম্ফন হয়েছে। মিল মালিকরাই কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করেছে।

 

বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০-৫২ আর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩-৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা। আগে এ চালের দাম ছিল ৫৪-৫৬ টাকা। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা পর্যন্ত।

 

রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। মাঝে দাম কিছুটা নিম্ন মুখী হলেও এখন আবার বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, মানুষ বর্তমান দামের থেকে অর্ধেক দামে আলু কিনতে অভ্যস্ত। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এরমধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে সামান্য পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

 

অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার কোনো কেনো দোকানে এ দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গত ১ নভেম্বর চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চিনি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক কমানো হয়। কিন্তু তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং এরমধ্যে দুই দফা চিনির দাম বেড়েছে।

 

এদিকে, ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও কিছুটা প্রভাব বাজারে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। খুচরা বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩০ টাকা দরে। যা পাড়া-মহল্লার দোকানে ১৪০ টাকা। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version