মোতাহার হোসেন: অনেক জল্পনা-কল্পানা শেষে ৩ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর চার উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর করা হয়েছে। একই সঙ্গে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়েরও। অবশ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনও একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার পদত্যাগপত্র জমা দেন জয়। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পদত্যাগের চিঠি কার্যকর হওয়া ৩ টেনোক্র্যাট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। একইভাবে পদত্যাগের চিঠি গৃহীত হওয়া প্রধানমন্ত্রীর ৪ উপদেষ্টা হলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টারে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।
পদত্যাগপত্র জমা দেয়া তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর ৩ উপদেষ্টাদের পদত্যাগের চিঠি সরকারিভাবে গৃহীত ও কার্যকর হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের অবহিত করলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানান, টেনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মোস্তফা জাব্বার, এবং মো. শামসুল আলমকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে মন্ত্রী ২ জন হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম তারা তিনজনই টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন) কোটায় মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী, মন্ত্রিসভার এক-দশমাংশ টেকনোক্র্যাট হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায়।
আর প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টা হলেন- অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার চার দিনের মাথায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করতে বলা হলো।
তবে মন্ত্রিসভায় থাকা অন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি। নির্বাচন কালে মন্ত্রী সভার আকার কেমন হবে,তারা কি কাজ করবেন এমন কোন সুনিদ্দিষ্ঠ বিধান না থাকায় বিদ্যমান মন্ত্রিসভা নীতি নির্ধারণী কোনস সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও কেবল মাত্র রুটিন ওর্য়াক চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে নির্বাচনী সিডিউল ও ঘোষণা হওয়ার পর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। পাশাপাশি সরকারি যানবাহন, পটোকল নিতে পারবে না।
প্রসঙ্গত ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরন তারিখ ঘোষণার পরপরই ১৯ নভেম্বরই পদত্যাগপত্র জমা দেন দুই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও একজন টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী। একইদিন পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টাও। অথচ পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরেও অফিস করেছেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।
বিষয়টি নিয়ে গত ২০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘যখন গেজেট প্রকাশ করে পদত্যাগ কার্যকর করা হবে, তখন থেকে তারা অফিস করবেন না। এখন তাদের অফিস করতে বাধা নেই।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন ও উপমন্ত্রী তিনজন। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভার এক-দশমাংশ অর্থাৎ দশভাগের একভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বাইরে থেকে নেয়ার সুযোগ আছে।
সংবিধানের ৫৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী থাকিবেন। ‘একই অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী, ‘প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন- তবে শর্ত থাকে যে, তাহাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে থেকে এটি টানা তৃতীয় মন্ত্রিসভা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টেকনোক্র্যাটসহ ৩০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিসভার আকার কেমন থাকবে, তা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন।
উল্লেখ্য, সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১৪ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। পরপর দুই মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
বর্তমান দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন। রুলস অব বিজনেসের ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী এ দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদশূন্য হলেও ওই মন্ত্রণালয়ে যেহেতু পূর্ণমন্ত্রী আছেন, তাই সেখানে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে আজই মন্ত্রিসভার তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। প্রধানমন্ত্রী রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ৩(বি) (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয়কে উপদেষ্টা পদে পুনঃনিয়োগ দিয়েছিলেন।
এর আগে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া প্রধানমন্ত্রীর অপর ৩ উপদেষ্টার পদত্যাগপত্রও গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুধবার (২৯ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ১৯ নভেম্বর সরকারের তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য