সামনে রেখে বিদেশি কূটনীতিকদের দৃশ্যমান তৎপরতা হঠাৎ করেই কমে গেছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর বেশির ভাগ কূটনীতিকরা মুখ খুলতে চাইছেন না।
এছাড়া শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক করতেও দেখা যায়নি।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে আসছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সেসব বৈঠক ছিল নিত্য ঘটনা। তবে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক বা নির্বাচন ইস্যুতে কূটনীতিকদের দৃশ্যমান তৎপরতা অনেকটাই কমে এসেছে।
নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূতরা সরব ছিলেন। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্টদূত পিটার হাস নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর চিঠিও হস্তান্তর করেন। সেই চিঠিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহব্বান জানানো হয়।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের লক্ষ্যে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। সেই তিনি বৈঠকে সংলাপের আহব্বান জানান। তবে সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দেন ওবায়দুল কাদের। তারপরের দিনই ১৬ নভেম্বর পিটার হাস ছূটি কাটাতে শ্রীলঙ্কা যান।
তিনি ১১ দিন ছূটি কাটিয়ে ২৭ নভেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ফেরার পর ৩০ নভেম্বর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন পিটার হাস। বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে রুটিন বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৈঠকে উপস্থিত কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি। বৈঠক নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাকে যারা ব্রিফ করেছেন, তা এ বিষয়ে আলোচনার কথা কিছু বলেননি।
এছাড়া ছুটি থেকে ফেরার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক তিনি বাংলাদেশকে বোয়িং বিমান কেনার প্রস্তাব দেন।
সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় কূটনীতিকদের তৎপরতা কমেছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতির দিকে তাদের নজর থাকবে। বিশেষ করে ভোটার উপস্থিতি ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে কূটনীকদের কৌতূহল থাকবে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহল থেকে অযৌক্তিক রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ করে জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে সংকল্পবদ্ধ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি কূটনীতিকদের সমালোচনা করে বলেছেন, কূটনীতিকরা তাদের দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন। কেউ এসে আমাদের অভ্যন্তরীণ
ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করুক, এগুলো আমরা মেনে নেব না। ভোট নিয়ে বিদেশিদের নাক গলানো গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য