-->
শিরোনাম

উদ্যোগ নেই দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলনের

মো. আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
উদ্যোগ নেই দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলনের
দীঘিপাড়া কয়লাখনি

দেশের উত্তর অঞ্চলের আবিষ্কৃত ৫ কয়লাখনির মধ্যে দীঘিপাড়ার কয়লাখনি একটি। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহারের সময় হলেও সরকারের এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি ও অর্থব্যয় বন্ধ করে, দীঘিপাড়ার কয়লাখনির কয়লা দিয়ে জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করা এখন সময়ের দাবি।

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কয়লার চড়া মূল্য হওয়ায়, দেশে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেহেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য সরকারকে এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫ কয়লাখনিতে মজুত ৩,১৯৭ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানির উৎস গ্যাস। বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জ্বালানি খাতের অবস্থা নাজুক।

 

এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়েকটি পাওয়ারপ্ল্যান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। দেশের গ্যাস মজুত যেহেতু অফুরন্ত নয়, তাই আগামী দিনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে উত্তর অঞ্চলের ৫ কয়লাখনি। দেশে আবিষ্কৃত কয়লা ৫৩টিসিএফ গ্যাসের মজুত, যা দেশে এ পর্যন্ত আহরিত গ্রাসের প্রায় ৪ গুণ বেশি। দিনাজপুরের ৩টি আবিষ্কৃত খনি বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়া।

 

অন্যদিকে আরো খনি হচ্ছে রংপুর খালাশপীর ও জয়পুর হাটের জামালগঞ্জ। শুধু দিনাজপুরের আবিষ্কৃত কয়লাখনিতে মজুত রয়েছে ১ হাজার ৪৬২ মিলিয়ন টন কয়লা। ১৯৮৫ সালে বিওএইচপি নামক একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে আরও একটি কয়লাখনি আবিষ্কার করেন। ১৯৯৭ সালে লন্ডনভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি এই এলাকায় ১০৭টি কুপ খননের মাধ্যমে উন্নতমানের কয়লা আবিষ্কার করেন।

 

এই কয়লাখনিতে ৬.৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুত নির্ধারণ করেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর এই খনিটি আবিষ্কার করেন। দীর্ঘ এক যুগ ধরে বেশ কয়েকটি কুপ খনন করে ৫০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুতের পরিমাণ যাচাই করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রাণালয়ের আওতায় বিসিএমসিএলের মাধ্যমে ৩ বছর মেয়াদি জরিপ কাজ চালানো হয়। জরিপ কাজ শেষে চীনা কোম্পানি দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। এই খনিটির তদারকের দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মো. জাফর সাদিক।

 

প্রকল্প পরিচালক সমীক্ষা শেষ করে খনিটির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে খনিটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। বর্তমান সরকার দেশের ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়ে দিলেও বর্তমান জ্বালানি খাতের সংকটের কারণে এই খনিটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এই খনিটি বাস্তবায়ন করা হলে মজুত কয়লা জ্বালানি খাতে সহায়ক হবে।

 

দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে যেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দেশীয় অর্থে ও বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে সেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ না থাকলে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণে এখনি উত্তম সময় দীঘিপাড়ার কয়লা খনিটি বাস্তবায়ন করে কয়লা উত্তোলন করা প্রয়োজন। তেল, গ্যাসের ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা আমাদের দেশের মতো এত উন্নত নয়। তারা তাদের দেশের অউন্নত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করছে। এতে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি নির্ভর কমে যাবে। বর্তমান বড়পুুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখ হয়েছে। ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার কয়লার ক্ষেত্রে ১১৮ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় ৬টি স্তরে কয়লার মজুত ৩৯০ মিলিয়ন টন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ১৯ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টন কয়লা উৎপাদন হয়েছে।

 

বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে সুরঙ্গ পথে কয়লা উত্তোলণ অব্যাহত রয়েছে। সুরঙ্গ পথে চীনা প্রযুক্তিতে কয়লা তোলায় খনিটির অফুরন্ত ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে খনিতে ব্যয় বাড়ছে। থেকে যাচ্ছে প্রায় ৮০ ভাগ কয়লা। উঠে আসছে ২০ ভাগ কয়লা। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে ধুকে ধুকে চলছে। বর্তমান ২নং ও ৩নং ইউনিট চালানো হচ্ছে। যেভাবে চালানো হচ্ছে তা বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না বলে জানা গেছে। এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভূগর্ভ থেকে স্বপ্ল মাত্রায় কয়লা উত্তোলন চলছে। ভূর্গভ থেকে আগের মতো এখন আর কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৭ সালের মধ্যে কয়লা খনিটির উৎপাদন অনেক অংশে কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

এ পদ্ধতি পরিবর্তন করে দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে করলে সরকার লাভবান হবেন। এইএলাকার মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জীবন জীবিকার পথ সুগম হবে।

 

দীঘিপাড়ার কয়লাখনির মজুত কয়লা উত্তোলনে সরকারের এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে কয়লা আমাদনি করছেন এবং অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানিতে ব্যবহার করছেন। এই এলাকার কয়লা উত্তোলন করা হলে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version