-->
শিরোনাম

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে হবে সংশোধন, থাকছে ‘শরীফার গল্প’

নিজস্ব প্রতিবেদক
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে হবে সংশোধন, থাকছে ‘শরীফার গল্প’

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্য বইয়ে কিছু সংশোধন আসছে। তবে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘শরীফার গল্প’ থাকছে। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের কিছু অধ্যায়ও পরিবর্তিত হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চ্যানেল আইকে নিশ্চিত করেছে যে, সব মিলিয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আসবে সংশোধনী।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কারিকুলাম সংক্রান্ত একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কারিকুলাম এবং পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় এই কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। এনসিটিবির প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বোর্ডসমূহের প্রতিনিধিরা এই কমিটির সদস্য হবেন।

 

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৩শ’ ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫শ’ ১৭ কপি নতুন বই বিতরণের কথা রয়েছে। প্রাথমিকের সব বই নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ১ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে গেলেও মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণির বই এখনও পৌঁছেনি বেশ কিছু এলাকায়। চলতি শিক্ষাবর্ষের বই শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক এড়াতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড।

 

প্রতি বছরই নতুন বই আসার পর বানান, বইয়ের মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠে। তবে এবার এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল তথ্য, ছাপার ভুলসহ আরও নানান বিষয়। এর সঙ্গে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য গুজব। সবমিলিয়ে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে চলে আসে সরকারের ১৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এই পাঠ্য পুস্তক প্রসঙ্গটি।

 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকারে চ্যানেল আইকে বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের ৭টি বইয়ে ভুলভাবে ছাপা হয়েছে। তাই বইগুলো উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।এমন অভিযোগের মধ্যেই বিতর্কের জন্ম হয় সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প নিয়ে। আলোচনা-সমালোচনার সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই ইস্যু নিয়ে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি এমনকি রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করে। নানা বিতর্ক ওঠায় ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এই কমিটি এই বছরের বই নিয়েই কাজ করবে। অনলাইনে যেসব অভিযোগ এসেছে তার মধ্যে কিছু অভিযোগ যেমন গ্রহণযোগ্য আবার এমন অনেক অভিযোগ আছে যেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।তিনি আরও বলেন, শরীফ থেকে শরীফা গল্পটি থাকছে তবে রি-রাইট হচ্ছে। বিজ্ঞানসহ আরো বেশ কয়েকটি বইয়ের সংশোধন দিতে হবে। আরও কোন সংশোধনের প্রয়োজন আছে কিনা, সেজন্যও কাজ চলছে। সব সংশোধন আসার পর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংশোধন করা বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।

 

আলোচনা-সমালোচনা মূলত শুরু হয় ১ জানুয়ারির বই উৎসবের দিনই। বই বিতরণ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার ৩১ হাজার ৪৭২টি বই ফেরত দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয় স্থানীয় শিক্ষা অফিস। বইয়ের মলাটের ভেতরের পাতায় ও শেষ পাতায় স্পষ্ট কিছু ভুল খুঁজে পান শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

 

স্থানীয় শিক্ষা অফিস গণমাধ্যমকে জানায়, বিতরণ করা ২৩৩টি বইয়ের মলাটের ভেতর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়বস্তু ছাপা হয়েছে। এসব কারণে বই ফেরত চাওয়া হয়। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি’কে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটির আহবায়ক করা হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদকে। কমিটিতে যুক্ত করা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা আলী মাদ্রাসার প্রতিনিধি।

 

এসবের মধ্যেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনসিটিবি। বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কোন পরামর্শ থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করে। অভিভাবক এবং শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে থেকে এনসিটিবির ওয়েব সাইটে মতামত আসতে শুরু করে।

 

এসব মতামত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা বিভিন্ন সুপারিশ, গণমাধ্যমে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা, প্রতিবেদন সব কিছু আমলে নিয়ে ‘মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কারিকুলাম সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটি গঠন’ গঠন করা হয়েছে-এমন মন্তব্য করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেছেন, যে ভুলগুলোর কথা মানুষ বলছে, এগুলো আসলে ভুল কিনা, এগুলোকে কিভাবে নির্দিষ্ট করা হবে এসব নির্ধারণ করবে এই কমিটি। এরসঙ্গে বিজ্ঞানের কিছু বিষয় আছে। সব নিয়েই কমিটি কাজ করবে। একই সঙ্গে যে অভিযোগ এসেছে সেগুলো যদি সত্যিই হয় অর্থাৎ ভুল থাকে সেগুলো দ্রুত সংশোধন করে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠানো যায় তা নিয়েও এই কমিটি কাজ করবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version