-->
শিরোনাম

মামলার তদন্তে জবানবন্দির নাম নিয়ে বেকায়দায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মামলার তদন্তে জবানবন্দির নাম নিয়ে বেকায়দায় পুলিশ

আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আসা কারও নাম মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ না দিতে উচ্চ আদালতের আদেশের পুনর্বিবেচনা চায় পুলিশ। এ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।

 

২০১৯ সালে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম একটি ফৌজদারি মামলার আদেশে বলেন, কোনো মামলার তদন্ত পর্যায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় অভিযুক্তের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির যথার্থতা বা বিশ্বাসযোগ্যতার বিচার করার কোনো ক্ষমতা তদন্ত কর্মকর্তার নেই। এটা যেভাবে আছে সেভাবেই তদন্ত কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। জবানবন্দির সত্যতা, যথার্থতা, স্বতঃস্ফূর্ততা যাচাই এবং মূল্যায়ন করা বিচারকের দায়িত্ব।

 

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘জবানবন্দি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুসরণ করতে হবে। আমাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে। এখন এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, উচ্চ আদালতের ওই আদেশের পর আসামির জবানবন্দিতে নাম আসা কারও বিরুদ্ধে তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিলে বাদী নারাজি দিচ্ছেন। বিচারিক আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিচ্ছেন। তাই উচ্চ আদালতের আদেশটির পুনর্বিবেচনা বা ভ্যাকেট চেয়ে ডিএমপি গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছে।

 

চিঠিতে ডিএমপি বলেছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কখনো কখনো শত্রুতা বা অন্য কোনো কারণে নিরীহ ব্যক্তির নামও বলেন আসামিরা। তাই উচ্চ আদালতের আদেশটি পুনর্বিবেচনা বা ভ্যাকেট করা যেতে পারে।

 

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কখনো কখনো আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কাউকে ফাঁসানোর জন্যও নাম বলেন। তাই কেবল একজন আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয় না। ওই ব্যক্তি আসলেই জড়িত কি না, তা তদন্ত কর্মকর্তাকে তথ্য, উপাত্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করে আসামি করতে হয়।

 

এ বিষয়ে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসরণ করেই বর্তমানে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে, আদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এতে কেউ যাতে বে-আইনি সুবিধা নিতে না পারে এবং নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য আমরা কাজ করছি।’

 

পুলিশের সূত্র বলছে, আসামির স্বীকারোক্তিতে আসা নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিলে বাদীর নারাজি আমলে নিয়ে আদালত মামলা পুনঃতদন্তের আদেশ দিচ্ছেন। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে এমন হয়েছে। এর একটি ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গুলশান কমার্স কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র গাজী মোহাম্মদ কাজল হত্যার ঘটনায় বাড্ডা থানায় করা মামলা। ওই মামলার এজাহারে নামোল্লেখ করা আট আসামির একজন সাব্বির হোসেন ইমন আদালতে জবানবন্দিতে ইকবাল হোসেন, মো. সাগর, মো. রিপন, মো. গোলাম রাব্বি, আমিনসহ আরও কয়েকজনের নাম জড়িত বলে উল্লেখ করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক নাদিম মাহমুদ ওই জবানবন্দিতে আসা ইকবাল ও আমিনের নাম বাদ দিয়ে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন। উচ্চ আদালতের আদেশ সংযুক্ত করে ওই বছরের ২৫ মে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন মামলার বাদী ও কাজলের বাবা মো. কামাল গাজী। বিচারিক আদালত নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন এবং ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে।

 

কামাল গাজী বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের নাম ইমন স্বীকারোক্তিতে বললেও দু’জনকে বাদ দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দেওয়ায় তিনি পুনঃতদন্ত চেয়েছেন।

 

উচ্চ আদালতের আদেশের ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কোনো আসামির দায় স্বীকার করে বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে অপর কারও নাম এলে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন না। তিনি নির্দোষ হলে বিচারিক আদালত থেকে দায়মুক্তি পাবেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে তিনি নির্দোষ হলে তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করতে পারেন। পুলিশ প্রতিবেদন বিচারের সহায়ক মাত্র। উচ্চ আদালতের ওই আদেশ সবাইকে অনুসরণ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version