-->

পেয়াজের ঝাঁঝে চোখে পানি নাকি দামে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
পেয়াজের ঝাঁঝে চোখে পানি নাকি দামে!

পেয়াজের ঝাঁঝে নাকি চোখে পানি আসে কিন্তু পেঁয়াজের ঝাঁঝে নয় যেন দামে বাজারে ‘আগুন’ লেগেছে। বৈশিক মন্দা আর সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত হু হু করে । গত মাসের মাঝামাঝি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। শেষ পর্যন্ত দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১০০ টাকায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। গত শুক্রবার তা এক লাফে হয়ে যায় ১২০ টাকা।

 

শনিবার গিয়ে ঠেকেছে ১৩০ টাকায় , রোববারে একই দাম বিরাজমান থাকলেও রমজান উপলক্ষে পণ্যের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা। ফলে দেখা গেল, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০-৫৫ টাকা। গড়ে প্রতিদিন বেড়েছে ৩ টাকার বেশি। তবে কী কারণে এভাবে দাম বাড়ছে তা জানেন না ক্রেতারা।

 

‘শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা মো. রায়হান কবির বলেন, ৩/৪ দিন আগেই পেঁয়াজ দাম ছিল ৯০ টাকা কেজি। দাম বেড়ে ১৩০ টাকা। তিন দিনের মধ্যে এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে গেল। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে এভাবে যখন-তখন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেবে, অথচ সরকারের কোনো মনিটরিং থাকবে না এটা কেমন কথা। ভোক্তারা জিম্মি সিন্ডিকেটের কাছে!’

 

‘অপরদিকে আগাঁরগাঁও এলাকার ইবাদুল ইসলাম নামের একজন যুবক, তিনি বলেন আগে আমার মাস প্রতি খাবারের খরচ হত ২২শ’ টাকা থেকে ২৫শ’ টাকা, এখন আমার মাস প্রতি খাওয়া খরচ বেড়েছে ৩৫শ’ থেকে ৩৭শ’ টাকার মত । যার ফলে তিনি প্রায় সকালে না খেয়ে জীবন ধারণ করছেন।

 

রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামলী, আগাঁরগাও ও মালিবাগ বাজারের বিক্রেতারা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার একই বাজারে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা শনিবার ছিল ১১৫ টাকা এবং যা তিন থেকে চার দিন আগে ছিল ৯০ টাকা। তিন দিন আগে ছিল ৮০ টাকা। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে ১১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গতকাল ছিল ১১৬ টাকা এবং তিন দিন আগে ছিল ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা।

 

হঠাৎ পেঁয়াজের এমন বাড়তি দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম শুক্রবার থেকে বাড়তি যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারে দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা। এরপর পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ। সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০/১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনা পড়ত ৮০/৮৫ টাকা, তখন খুচরা দোকানে ১০০/১০৫ টাকায় বিক্রি করেছি।

 

বিক্রেতারা বলেন, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। অবৈধভাবে কিছু ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এলেও চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। তবে বর্তমানে বাজারে থাকা মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে তিন দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে অনেকখানি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করবে- এমন খবরে রোববার সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ যদি না আসে, তাহলে দাম আবার বাড়বে। মাস খানেক পর বাজারে উঠবে হালি পেঁয়াজ। তার আগ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানান তারা।

 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

তবে বিক্রেতারা পেঁয়াজের সরবরাহ কমের কথা বললেও কারওয়ান বাজার ঘুরে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বরং বস্তার পর বস্তা পেঁয়াজ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version