-->

দুদক শতভাগ ডিজিটাল হবে কবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুদক শতভাগ ডিজিটাল হবে কবে

দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে নিয়োজিত সাংবিধানিক সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটিতে অভিযোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে অনুসন্ধান, মামলা পরিচালনা ও তদন্ত কার্যক্রমসহ সব কাজই ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কয়েকবছর আগেই। এসব কাজ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণের জন্য ওয়েবভিত্তিক ‘ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-আইপিএমএস নামে একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে কিছু কাজও হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ কাজই পরিচালিত হচ্ছে আগের মতো ‘ম্যানুয়ালি’। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যারসহ সার্ভার ও জনবল সবই আছে। অজ্ঞাত কারণে দুদককে দীর্ঘদিনেও শতভাগ ডিজিটালাইজড করা সম্ভব হয়নি।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদকের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২০২১ সালের আগস্টে ডিজিটাইজেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ‘টেকনো হ্যাভেন’ ও ‘টেকনো ভিসতা’ নামে দুটি আইটি প্রতিষ্ঠান এই ডিজিটাইজেশনের কাজ করে। প্রায় এক বছর আগে এই আইটি প্রতিষ্ঠান দুটি আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যারসহ সার্ভার স্থাপনের কাজ শেষ করে কমিশনকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এক বছর পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে এর কার্যক্রম চালাবে। এর কার্যক্রম পুরোদমে চালু করার বিষয়ে গত ডিসেম্বরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

 

কমিশনের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কমিশনে অভিযোগ দায়ের, অনুসন্ধান, তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের কার্যক্রম মনিটরিংসহ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির সময় কমাতে আইপিএমএস সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দুদকের বর্তমান দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিরূপণ এবং দুর্নীতি অনুসন্ধান ও তদন্তের অন্তরায়গুলো নিরূপণ বিষয়ে দুটি গবেষণা করা হয়েছে।

 

‘দুদককে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে (দ্বিতীয় সংশোধিত) ৪ হাজার ৪৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিজিটাল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুদকের নিজস্ব ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাব পরিচালনার জন্য কমিশনের ১৬ কর্মকর্তাকে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ‘ডকুমেন্ট ফরেনসিক সিস্টেম’ কেনা হয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে আলামত হিসেবে পাওয়া দলিলের সঠিকতা যাচাইসহ জাল স্বাক্ষর, জাল দলিল যাচাই, জাল পাসপোর্ট শনাক্তকরণ ও ডকুমেন্ট জালিয়াতি বের করা সম্ভব হবে।

 

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় দুটি মাইক্রোবাস, ২৫০টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৬৬টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার এবং ৫০টি প্রিন্টার মেশিন কেনা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৪০ জন কর্মকর্তা বিদেশে, ৯৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ১ হাজার ১০০ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দুদকের কার্যক্রম সহজ ও গতিশীল করার জন্য সব কার্যালয় অটোমেশন করাসহ আরও কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে চায় দুদক। কমিশনের প্রধান কার্যালয়সহ আটটি বিভাগীয় কার্যালয়, ২২টি জেলা কার্যালয়ে ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক’ বা আইপি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে।

 

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ই-নথি চালু হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না মূলত ‘আন্তরিকতার অভাবে’।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের মহাপরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্তরিকতার অভাবের অভিযোগ সঠিক নয়। দুদক এখন পুরোপুরি ডিজিটাল। ফরেনসিক ল্যাবসহ আইপিএমএস কার্যক্রম এখন পুরোপুরি কার্যকর।’

 

ভোরের আকাশ/মি

 

মন্তব্য

Beta version