৯ হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক/প্রবাসী বিদেশের কারাগারে আটক রয়েছেন বলে সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, এসব বন্দিরা ২৭টি দেশের কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের কারাগারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৪৬ জন আটক রয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুরস্কের কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৫০৮ জন।
সোমবার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
মন্ত্রী জানান, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ২২৬ জনকে লিবিয়া থেকে, ৫১ জনকে ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের জেলখানা থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের জেলখানা থেকে আরও প্রায় ১ হাজার ৯৫০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার ৮১টি দূতাবাসের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। প্রাথমিকভাবে দূতাবাস সমূহ ভাড়া করা ভবনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করলেও ২০১৬-২৪ সালব্যাপী ৩টি পর্যায়ে ৩২টি মিশনের জন্য জমি থাকা সাপেক্ষে নিজস্ব ভবন নির্মাণ, অথবা জমিসহ তৈরি ভবন কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বর্তমানে ১৪টি দেশে বাংলাদেশের ১৭টি দূতাবাস রয়েছে। এছাড়া ৭টি দেশে মালিকাধীন জমি রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত কক্সবাজার এবং ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণের সফর রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এবং বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চলমান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ স্বাগতিক দেশসমূহের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা কামনা করে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮ লাখের অধিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে বসবাস করে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্য শ্রমবাজারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমশক্তি প্রেরণের সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে অবশ্যই তা বৈধ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হতে হবে। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অভিবাসন ও কর্মসংস্থান সহযোগিতা বাড়াতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বাংলাদেশে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকল্পে দেশের অর্জিত সাফল্যসমূহ বিশ্ববাসীকে অবহিত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজ ও এক্স-এ (সাবেক টুইটার) সক্রিয় ও নিয়মিত উপস্থিতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কার্যক্রম চলমান আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অসত্য ও অপপ্রচারমূলক সংবাদ/প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জনকূটনীতি অনুবিভাগ এসব প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করে থাকে, যা এসব গণমাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচার করা হয়ে থাকে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের প্রচলিত আইন অনুযায়ীও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা এখনও চলমান। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম এখনও চলমান থাকায় এখনই বিস্তারিত তথ্য প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য