-->
শিরোনাম
বেইলি রোড ট্রাজেডি

আগুনে পোড়া ভবন এখন শুধুই আতঙ্ক

সুপ্তি রায়
আগুনে পোড়া ভবন এখন শুধুই আতঙ্ক
বেইলি রোড ট্রাজেডি

রাশিদা কবির মুক্তা ও দুদকের কর্মকর্তা মো. কবির খান জুয়েল দম্পত্তির তিন কন্যার মধ্যে দোলা আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে আইএফআইসি ব্যাংকে চাকরি করেন। বছর দুয়েক আগে তার বিয়ে হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফিরলে বিকেলে তার বান্ধবী স্মৃতি এজিবি কলোনির বাসা থেকে তাকে নিয়ে যায়। অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় দুই বান্ধবী হাটতে হাটতে বেইলি রোডে ঢোকে।

 

সে সময়ে বড় বোন দোলার ফোন পেয়ে আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছোট বোন মাহি বোনের বান্ধবী স্মৃতির সাথে মিলিত হয়। তিনজন নৈশভোজ সারতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই'তে ঢোকেন। আকস্মাৎ নিচ তলার ফাস্ট ফুডের দোকানে আগুন লেগে দ্রুত উপর দিকে ছড়িয়ে পড়ে। হন্তদন্ত হয়ে সকলেই প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকে। স্মৃতি যেকোনোভাবে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। কিন্তু ছুটতে গিয়ে মাহি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলে দোলা তাকে তুলতে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড বিলম্ব হয়ে যায়। শেষ পরিণতিতে দুজনকেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। তবে সে সময়ে মায়ের সাথে একবার কথা হলে তারা বলেন, ‘মা আমরা আটকা পড়েছি।’ কিয়ৎক্ষণ পর তাদের ফোনের আর অস্তিত্ব নেই।

মা-বাবা এবার তাদের সন্ধানে ছুটতে থাকে। কোথায় যাবে? কি করবে? কিন্তু তাদের আর সন্ধান নেই। অবশেষে তাদের নিথর দেহ খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। তাদের তিন কন্যার বড় দু'জনের জীবন্তিকার অবসান হয়। রাত শেষে শবদেহ লাশবাহী গাড়িতে করে আসে বাসার সামনে। বিকেলে শাহজাহানপুর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এভাবেই বেইলি রোড ট্রাজেডিতে দোলা ও মাহির মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তাদের খালাতে ভাই হুমায়ন কবির।

শুধু দোলা ও মাহি নন বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন পুড়ে ছাই হয়েছে ৪৬টি তাজা প্রাণ। আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নিউমার্কেট জোন পুলিশের কমিশনার রিফাতুল ইসলাম।

আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সৈয়দ মোবারক হোসেন, বয়স ৪২ বছর। গ্রামের বাড়ি- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার শাহবাজপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ইতালিতে ব্যবসা করতেন। মাসখানেক আগে ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন। ইতালিতে স্থায়ীভাবে (গ্রিন কার্ড) থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভিসাও হয়ে গিয়েছিল সবার। কিন্তু ইতালি আর যাওয়া হলো না তাদের। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৫ সদস্য।

নিহতের চাচাতো ভাই ফয়সাল জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতে ডিনার করতে গিয়েছিলেন মোবারক। সঙ্গে ছিল স্ত্রী স্বপ্না, দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফিয়া ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। আগুনে পুড়ে সবাই মারা গেছেন।

আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, পরিবারের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর শোকে বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে নিহত তরুণ মো. নাঈমের মা মোসা. লাকি বেগম। দরিদ্র পরিবারে জন্ম মো. নাঈমুলের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এসেছিলেন ঢাকায়। বাবা-মায়ের কষ্ট লাগব করতে এইচএসসি পাস করা মো. নাঈম রাত দিন পরিশ্রম করতো দুঃখ কষ্ট মোসার চেষ্টা করছিলেন।

 

শুক্রবার দুপুরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন, ফুলঝুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার কবির। মো. নাঈম বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের ছোট গৌরীচন্না এলাকার দরিদ্র ভ্যানচালক মো. নান্টু ও মোসা. লাকি দম্পত্তির একমাত্র ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন নাঈম।

পুরো বিল্ডিংয়ে যখন আগুন ছড়িয়ে পরেছিল তখন বাঁচার জন্য ভবনের ছাদে গিয়ে বাবাকে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানায় নাঈম। পরে নাঈমকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। শেষবারের মতো নিথর দেহে ছেলেকে দেখতে হল বাবাকে।

আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার জানান, শনাক্তের পর গতকাল শনিবার সকালে স্ত্রী-সন্তানসহ নিহত কাস্টমস কর্মকর্তার মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তার শ্বশুর মুক্তার আলম হিলালী বলেন, ‘আমার মেয়ে-জামাই ও তার সাড়ে তিন বছরের মেয়ের মরদেহ জেলা প্রশাসন হস্তান্তর করেছে। তাদের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া থানা এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।’

 

তিনি বলেন, তারা কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় বসবাস করতো। কক্সবাজারের রামুতে এবং পরে উখিয়ায় জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে এই শিশুর মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখনো মরদেহের ওপরে কোনো কাপড় ছিল না। মর্গে ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করছিলেন। কিছুক্ষণ পর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মরদেহ। পাশে রয়েছে এক নারীর মরদেহ। তখন ধারণা করা হয়, তারা সম্পর্কে মা এবং মেয়ে। ওই শিশুটির নাম ফাইরোজ কাশেম। আর পাশের লাশটি হলো তার মা মেহেরুন নেসা জাহান হেলালির। তাদের সঙ্গে মারা গেছেন ফাইরোজের বাবা শাহজালাল উদ্দিনও। তার বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ার পূর্ব গোমালিয়ায়। গতকাল রাতে লাশগুলো শনাক্ত করেন মেহেরুন নেসার বাবা মুক্তার আলম হেলালি।

 

আমাদের সিলেট ব্যুরো জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ডে হবিগঞ্জের বাসিন্দা ও ফিলিপাইনের নাগরিক মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

নিহতরা হলেন, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় বানেশ্বরপুর গ্রামের পোল্যান্ড প্রবাসী উত্তম কুমার রায়ের স্ত্রী রুবি রায় (৪০) ও মেয়ে প্রিয়াংকা রায় (১৭)। নিহত রুবি ফিলিপাইনের নাগরিক। প্রায় ২৮ বছর আগে বাংলাদেশি নাগরিক উত্তম কুমারের সঙ্গে তার বিয়ে হয় বলে জানা গেছে।

নিহতদের পরিবারের সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে ‘কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ’ থেকে খাবার আনতে যান মা রুবি ও মেয়ে প্রিয়াংকা। এ সময় সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মা-মেয়ে নিহত হন। মৃত্যুর খবর পেয়ে উত্তম রায় পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

 

আমাদের যশোর প্রতিনিধি জানান, বাবা ইজিবাইক চালক, সংসারের হাল ধরতে ২ মাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় চাকরি নিয়েছিলেন কামরুল হাবিব রকি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ওই রেস্তোরাঁয় আগুন লাগলে অন্যদের সঙ্গে ভেতরে আটকা পড়েন তিনিও। দাউদাউ আগুন দেখে মায়ের কাছে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন ২১ বছরের এই তরুণ। কিন্তু বেঁচে ফেরা হয়নি তার। রকির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কামারপাড়ায়। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তার পোড়া লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে।

 

মা রিপা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমারে কল দিয়েছিল। দিয়ে বলছিল, ‘মা আমার কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। আমারে বাঁচাও। আম্মু আমি আর বাঁচব না।’ তারপরে আর কোনো কথাও হলো না। বাদ জুমা স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রকির মরদেহ দাফন করা হয়।

আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. আতাউর রহমান শামীম। এক নিকটাত্মীয়কে নিয়ে রেস্তোরাঁয় কফি খেতে গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা নূরুল আলম জানান, তারা রেস্তোরাঁয় ঢোকার ৫ মিনিটের মাথায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তারা প্রথমে নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে কিছু না দেখায় সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকেন। এ সময় ভিড়ে শামীমকে আর দেখতে পাননি। তিনি বেঁচে ফিরলেও পরে শামীমের মরদেহ পাওয়া যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় কুলাউড়া নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আমাদের ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার তুষার হালদারের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি শৌলজালিয়ার তালগাছিয়া গ্রামে। নিহত তুষারের বাবা দীনেশ হাওলাদার শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশ গ্রহণ করেন। সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটে বেড়ানোই তাদের কাজ। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তারাই সংবাদের শিরোনাম। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে পুড়ে মারা যাওয়া এ দুই সংবাদকর্মী হলেন তুষার হাওলাদার এবং অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দ্য রিপোর্ট অনলাইন পোর্টালের ইলেকশন কমিশন বিটের রিপোর্টার ছিলেন। গত মাসে তিনি সেখান থেকে চাকরি ছাড়েন। আর তুষার হাওলাদার সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতা করার পর এ বছর স্টার টেক কোম্পানিতে যোগ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ

 

হাসপাতালে উপস্থিত থাকা তার সহকর্মীদের একজন জানালেন, নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অভিশ্রুতি স্টার টেক লিমিটেডের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ তুষার হাওলাদারসহ কয়েকজন মিলে বেইলি রোডের ওই ভবনে খেতে গিয়েছিলেন। তুষার হাওলাদারও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনিও একই নিউজ পোর্টালের সাবেক সংবাদকর্মী ছিলেন।

আমাদের পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, ছেলেকে নিয়ে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে এসেছিলেন তানজিনা নওরিন এশা (৩২)। সঙ্গে ছিলেন খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া ইসলাম ও তার দুই সন্তান। আগুন লাগার পর ছেলে আরহামসহ অন্যদের আগে বের করে দেন এশা। তাদের পেছনেই ছিলেন তিনি। লামিয়া অন্যদের নিয়ে বের হতে পারলেও এশা পারেননি। কারণ হঠাৎ বিস্ফোরণে পথ হারান তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন পিরোজপুরের এশা। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। শুক্রবার লাশবাহী গাড়িতে এশার নিথর দেহ পৌঁছায় পিরোজপুরের মাতৃসদন সড়কের খালার বাড়িতে। পরে সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় নড়াইলপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে। আসরের নামাজের পর পৌর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

আমাদের পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, অর্থাভাবে বেশিদূর পড়াশোনা করতে না পারা মানুষটির আয়ে জুটত ৮ সদস্যের পরিবারের আহার। সেই মানুষটিই বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের আগুনে মারা গেছেন। একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে দিশেহারা পুরো পরিবার। নিহতের নাম জুয়েল রানা। তার বাবার নাম ইসমাইল গাজী। বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। পরিবারের জন্য আয় করতে ৭ বছর আগে রাজধানী ঢাকায় আসেন তিনি। ৭ মাস ধরে ওই রেস্টুরেন্টে চাকরি করছিলেন তিনি। জানা যায়, জুয়েলের দুই সন্তান রয়েছে।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনে নিহত হন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের আইনজীবী আওলাদ হোসেন খানের ছোট মেয়ে প্রিয়তি (২০)। অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন প্রিয়তির বড় বোন কানাডা প্রবাসী তাসনোভা খান সুহা ও তার আট বছর বয়সী মেয়ে সায়েবা। ভাই সাজিদ খান পিয়াল জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি কানাডা থেকে দেশে ফেরেন তার বড় বোন সুহা। অসুস্থ বাবাকে দেখতে বড় বোনকে নিয়ে শুক্রবার সকালে বাড়ি ফেরার কথা ছিল প্রিয়তির। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে তারা চারজন রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েন। শুক্রবার দুপুরে প্রিয়তির মরদেহ নেওয়া হয় বাড়িতে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয়তির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনটিতে দুই শিশুসন্তানসহ খাবার খেতে গিয়েছিলেন নাজিয়া আহমেদ নামের এক নারী। ভবনে আগুনের খবরে শুরু হয় ছোটাছুটি, দুই সন্তানসহ তিনিও ছুটছিলেন। একসময় হাতছাড়া হয়ে যায় তিন বছরের আবিয়াত। নাজিয়া তার স্বামী সায়েক আহমেদ আশিককে ফোন করে জানিয়ে ছিলেন, ‘ভবনে আগুন লেগেছে। ভিড়ে ছোট ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেন না।’ এরপর আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস আবিয়াতের মরদেহ পায় তৃতীয় তলার সিঁড়িতে। আগুনে মারা যান নাজিয়া ও তার বড় সন্তান আরহান আহমেদও। নাজিয়া পরিবার নিয়ে থাকতেন ওই বেইলি রোডেই।

 

অন্যদিকে, মেয়ে জান্নাতিন তাজরী নিকিতাকে নিয়ে ‘কাচ্ছি ভাই’-এ খেতে গিয়েছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল প্রভাতি শাখার সিনিয়র শিক্ষক লুৎফুন নাহার করিম লাকী। রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগার পর পরিবারের কাছে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন লাকী ‘ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদের বাঁচানো যায়নি। বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে মারা গেছেন লাকী ও তার মেয়ে নিকিতা।

পরিবারের বরাত দিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী জানান, লুৎফুন নাহারের এক মেয়ে, এক ছেলে। তার স্বামীর নাম মহিউদ্দিন খোকন। তাদের বাসা রাজধানীর সার্কিট হাউস রোড এলাকায়। লাকী ২০১০ সাল থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। হিসাববিজ্ঞান পড়াতেন। তার মেয়ে নিকিতা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। আর লুৎফুন নাহারের ছেলে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের পর শুনশান নীরবতা বেইলি রোড এলাকায়। পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভবনটি। যাত্রাপথে কৌতুহলবশত অনেকেই এক নজর দেখে যাচ্ছেন। বহুতল ওই ভবন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে পুলিশ। আলো ঝলমলে বেইলি রোডের এ এক অচেনা রূপ। বৃহস্পতিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পর কেমন নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে আশপাশ। বহুতল এই ভবনে এখন শ্মশানের মতো নীরবতা। আগের রাতে ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে এখনও চমকে উঠছেন অনেকে। চোখমুখ জুড়ে আতঙ্ক-এখনও পীড়া দিচ্ছে অনেককে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version