-->

সরকারিভাবে মডেল মসজিদ নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থী : শাহরিয়ার কবির

অনলাইন ডেস্ক
সরকারিভাবে মডেল মসজিদ নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থী : শাহরিয়ার কবির

রাজনীতির মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ প্রতিহত করতে না পারলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি হল রুমে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

 

দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সাম্প্রদায়িকতা তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির বলেন, আপনারা দুর্নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগকে তুলোধুনো করতে পারেন। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে এর চেয়েও বড় বিপদ আমাদের সামনে আছে। দুর্নীতির বাইরে কোন দেশ আছে এই উপমহাদেশে, একটি দেশের নাম বলুন? ভারত দুর্নীতির বাইরে? পাকিস্তান দুর্নীতির বাইরে? কিন্তু যেভাবে আমাদের সমাজ রাজনীতির মৌলবাদীকরণ সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে, এটাকে প্রতিহত করতে না পারলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে, পাকিস্তান মানে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমাদের উদ্বেগটা হচ্ছে সেই জায়গায়।

 

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বললেন, পরিবেশ নিয়ে কথা বললেন। অনেক বিষয় নিয়ে কথা উঠে এসেছে। কিন্তু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ফোকাস করছে সংবিধানের মূল জায়গাটিতে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চেতনায় আমাদের ফিরে যেতে হবে।

 

শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সংবিধানের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নাগরিক আন্দোলন করছে। কিন্তু এখন আমরা যে আগামীর নাগরিক আন্দোলনের কথা বলছি, তা নির্মূল কমিটির একার দায়িত্ব নয়, এর সঙ্গে যত সমমনা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তি আছে, এদের সবাইকে নিয়ে আন্দোলনটা করতে হবে। যেখানে বিরোধী দল অনুপস্থিত থাকে সেখানে নাগরিকদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, সমস্ত গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’

 

সারাদেশে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে মডেল মসজিদ নির্মাণ সংবিধানের পরিপন্থী দাবি করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, মডেল মসজিদ নিয়ে একমাত্র নির্মূল কমিটি প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশের কোনো সংগঠনের কোনো সাহস হয়নি এ প্রসঙ্গ তোলার। ৫৬০টা মডেল মসজিদ বানাচ্ছে সরকার, কাদের টাকা দিয়ে? আমাদের জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এগুলো বানানো হচ্ছে। এটা সংবিধান পরিপন্থী আমরা বলেছি। সংবিধানের ৭ এর ক ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে- রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। আপনি যদি ৫৬০টা মডেল মসজিদ বানান, কেন আপনি ৫৬টা মন্দির প্যাগোডা গির্জা বানাবেন না। আর তাই যদি করতে হয় তাহলে সমস্ত অর্থ সেখানে আপনি ব্যয় করুন।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যে দল সরকারে আছে সেই দলই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে দিয়েছিল। এখন এই সরকারে অনেক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী লোক ঢুকে পড়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, প্রশাসনে, বিচার বিভাগে, পুলিশে সব জায়গায় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা জেঁকে বসেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন না করে তারা এই সরকারকে প্রভাবিত করছে। এটি কিন্তু বাস্তব সত্য, যার জন্য মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই দিকে দেশ এগোচ্ছে না।

 

তিনি আরও বলেন, এখন দল ভারি করার জন্য জামায়াত-বিএনপি-শিবির এদের নিলে দলের যে বৈশিষ্ট্য সেটি আর থাকবে না। যারা জামায়াত-শিবির-বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগে ঢোকার চেষ্টা করছে তাদের একটাই উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগে ঢুকে আওয়ামী লীগের লোকদের যদি জামাতি ভাব ধারায়, জামাতি আদর্শে পরিণত করা যায়। সেই দিকে তারা এগোচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সেদিকে খেয়াল করছে না। তারা ভাবছে যে দলকে ভারি করাই বেশি প্রয়োজন।

 

আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো আফজাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. মফিজুল ইসলাম মান্টু প্রমুখ। সভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version