-->

সরকার নির্ধারিত ১৬৩ টাকায় কোথাও নেই সয়াবিন তেল

অনলাইন ডেস্ক
সরকার নির্ধারিত ১৬৩ টাকায় কোথাও নেই সয়াবিন তেল

সরকার খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা ও বোতলজাত ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এই দামে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানে খোলা সয়াবিন তেল ১৫৫ থেকে ১৬০ এবং বোতলজাত তেল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার ও শুক্রাবাদ বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে তেলের বাজারে দাম নিয়ে এমন হুলস্থুল কাণ্ডের কারণে অনেকে সাময়িকভাবে তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা আসে। ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ তথ্য জানান। ১ মার্চ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছিল।

 

দোকানিরা বলছেন, দাম কমানোর ঘোষণার পর পাইকারি বাজার থেকে পর্যাপ্ত তেল ছাড়ছে না। আর সরকার দাম কমানোর পর পাইকারি বাজার থেকে অর্ডারের তেল এখনও দোকানে আসেনি। অন্যদিকে সরকার কর্তৃক দাম কমানোর ৬ দিন পরও সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন ক্রেতারা।

 

তেলের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মুদি দোকান নূর আলম জেনারেল স্টোরের মালিক নূর আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, “কম দামের তেল আমরাই পাচ্ছি না। কম দামে বিক্রি করব কীভাবে।” তিনি আরও বলেন, “ডিলাররা এখনো পুরোনো দামেই সয়াবিন দিচ্ছে। দাম সামান্য করে কমাচ্ছে। তাতে আমরা আগের থেকে কিছুটা কম দামে ক্রেতাদের সয়াবিন দিতে পারছি।”

 

সরকার ঘোষণার আগে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতেন বলে জানান এই খুচরা বিক্রেতা। শামীম নামের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, “কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে বাড়তি দামের মোড়ক লাগিয়ে রাখে। কিন্তু কমানোর সময় ধীরগতিতে কমায়। এবার নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা বেশ আগেভাগে দেওয়া হলেও মিল থেকে ডিলার হয়ে এখনো নতুন দামের পণ্য আসেনি। সে জন্য ভোক্তা পর্যায়ে এখনো ভোজ্যতেলের দাম কমানোর সুবিধা পুরোটা মিলছে না।”

 

অন্যদিকে তেলের বাজারের এই পরিস্থিতির কারণে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে কারওয়ান বাজারের জনতা স্টোরে। দোকানের মালিক সিকান্দার ঢাকা টাইমসকে বলেন, “সরকার যে ঘোষণা দেয়, যে দাম ঠিক করে দেয়, কোম্পানি সেই দামে মাল ছাড়ে না। ছাড়লেও যে দামে দেয় তাতে মালা বিক্রি করে আরও লস হয়। আবার বেশি মাল রাখলে হুট করে সরকার দাম কমিয়ে দেয়। এতে আমাদের লসে পড়তে হয়। এ কারণে বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।”

 

কারওয়ান বাজারে তেল কিনতে আসা রাইসুল অরণ্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, “সরকার থেকে দাম কমানোর পরও বেশি দামে তেল বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন, নতুন তেল আসেনি তাই তারা দাম বেশি রাখছেন। কিন্তু দাম বাড়ালে তখন তো নতুনের জন্য অপেক্ষা করে না। দাম বাড়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সেটি বাস্তবায়ন করে ফেলেন।” এ বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

 

আব্দুল গফুর নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, “বাজারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো কর্তৃত্ব নেই। সরকারের বাজার মনিটরিং বা ভোক্তা অধিদপ্তর ঠিক মতো মনিটরিং করে কিনা সেটাও বড় একটা প্রশ্ন। সরকার দাম বাড়ানোর পরই যদি বাজারে দাম বাড়তে পারে তাহলে দাম কমানোর পর যদি দাম না কমে তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন চলে আসে, দাম কমাতে সরকারের স্বচ্ছিচ্ছা আছে কিনা। যদি সে ইচ্ছা থাকতো তাহলে বাজার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”

 

মঙ্গলবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, “বাজারে ১৬৩ টাকায় প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং ১৪৯ টাকায় খোলা তেল পাওয়া না গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনারা যে কোনো বাজারে গিয়ে যদি দেখেন ১৬৩ টাকা মূল্যের তেল নেই, তাহলে আমাদের জানাবেন। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১ তারিখ থেকে সব করাখানা থেকে ১৬৩ টাকা দরে প্রতিলিটার সয়াবিন তেল বাজারজাত করা হচ্ছে, এটা আমরা নিশ্চিত করেছি।”

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version