-->
শিরোনাম

ফিরতি ঈদযাত্রা: আগের দামে টিকিট নেই, দ্বিগুণ দিলে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফিরতি ঈদযাত্রা: আগের দামে টিকিট নেই, দ্বিগুণ দিলে আছে

ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায় অতিরিক্ত বাস ভাড়া গুনতে হচ্ছে রংপুর থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীদের। কাউন্টারে টিকিট নেই—এমনটি জানিয়ে কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করলেও কোনও প্রতিকার মিলছে না। প্রতিবাদ করলে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এতে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন।

 

রংপুর নগরীর কামারপাড়ায় ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বাসগুলো। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির দুই শতাধিক বাস এখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, টিকিট নিয়ে চলছে বাস মালিক ও শ্রমিকদের নৈরাজ্য। কাউন্টারগুলো থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী কোনও বাসের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও বাসের টিকিট নেই বলে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে যাত্রীদের। তবে টিকিট নেই বলা হলেও কালোবাজারে বিক্রি চলছে পুরোদমে। কাউন্টারের লোকজন বাইরে দাঁড়িয়ে নন-এসি বাসের ৮০০ টাকার টিকিট ১৫০০ এবং এসি ১৫০০ টাকার টিকিট আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে একাধিক বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কোনও বাসের টিকিট নেই। সবই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন কাউন্টারের লোকজন। অথচ কাউন্টারের আশপাশে দাঁড়িয়ে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করছেন তারা। অনেকে বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন।

 

একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, কোনও ধরনের আগাম ঘোষণা না দিয়ে ‘টিকিট নেই’ বলে তাদের জিম্মি করা হয়েছে। এখন বিক্রি দামে বিক্রি হচ্ছে। আগের দামে টিকিট চাইলে বলে নেই, দ্বিগুণ দাম দিলে বলে আছে। এই পরিস্থিতি দেখার কেউ নেই। ফলে মিলছে না কোনও প্রতিকার।

এসআর ট্রাভেলস পরিবহনের কাউন্টার থেকে যাত্রীদের জানানো হচ্ছে, ১৫ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এসি কিংবা নন এসি কোনও বাসের টিকিট নেই। জানতে চাইলে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা দুলাল হোসেন বলেন, ‘১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। না থাকলে কোথা থেকে দেবো যাত্রীদের।’

 

ঈদের আগে বা পরে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কোনও ঘোষণা কেন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের কোনও হাত নেই। বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।’

 

একইভাবে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গেলে যাত্রীদের জানানো হচ্ছে, আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাগামী কোনও বাসের টিকিট নেই। অথচ দেখা গেলো, কাউন্টারের পাশেই কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করছেন কর্মচারীরা।

 

রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট নিতে এসেছিলেন শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘সোমবার কাজে যোগ দিতে হবে। সেজন্য রবিবারের টিকিট নিতে এসেছিলাম। কিন্তু পাচ্ছি না। এতে মহাবিপদে পড়েছি। কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হচ্ছে, এই সপ্তাহে কোনও টিকিট নেই।’

 

একই কথা জানালেন লালমনিরহাট থেকে চট্টগ্রামের বাসের টিকিট কিনতে আসা লাইলী আক্তার। দুই ঘণ্টা ধরে সবগুলো কাউন্টারে ঘুরেও টিকিট পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি, স্বামী এবং ননদ চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় চাকরি করি। দুই ঘণ্টা ধরে সবগুলো কাউন্টারে ঘুরলাম, কিন্তু কোথাও টিকিট পেলাম না। অথচ কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কাউন্টারের লোকজনই এসব টিকিট বিক্রি করছেন।’

 

একই অবস্থা শ্যামলী, নাবিল ও ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারেও। কাউন্টারগুলো থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, টিকিট নেই। অথচ বাইরে দাঁড়িয়ে বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছেন কাউন্টারের লোকজন।

 

রংপুর বাস-২ কাউন্টারে টিকিট নেই—এমনটি জানিয়ে কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করলেও কোনও প্রতিকার মিলছে না ঢাকার যাত্রী বেলাল হোসেন ও মোরশেদ আলম জানালেন, ঈদের দুদিন আগে কামারপাড়ায় ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে অগ্রিম টিকিট কিনতে এসেছিলেন। তখন কাউন্টার থেকে বলা হয়েছিল, ঈদের পরে আসেন। টিকিটের সমস্যা হবে না। কিন্তু শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে কোনও কাউন্টারে টিকিট পাননি। কোনও কাউন্টারে নোটিশ দেওয়া নেই, টিকিট বিক্রি শেষ। আসলে কাউন্টার থেকে টিকিট নেই বলা হলেও তারা তাদের লোকজন দিয়ে কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। এজন্য যাত্রীদের বলা হচ্ছে নেই।

 

কাউন্টার সংলগ্ন এলাকায় দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করছিলেন কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক ও কাউন্টারের কর্মচারীরা। সাংবাদিক দেখে দ্রুত সটকে পড়েন তারা।

 

যাত্রীরা জানিয়েছেন, এসআর ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, এনা পরিবহন, রংধনু, শ্যামলী পরিবহন ও আগমনী পরিবহনের ৭০০ টাকার নন-এসি টিকিট ৮৭০, ১৫০০ টাকার এসি টিকিট আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কাউন্টারের কর্মচারীরা গোপনে এসব টিকিট বিক্রি করছেন।

 

উন্টারের কয়েকজন দায়িত্বশীল জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে যাত্রী না থাকায় খালি গাড়ি নিয়ে রংপুরে আসতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি খরচও ওঠে না। লোকসান কমাতে টিকিটের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে নাবিল পরিবহনের কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‌‘ঈদ উপলক্ষে খালি গাড়ি ঢাকা থেকে রংপুরে আসছে। আসলে যাত্রীদের চাপের কারণে এই সার্ভিস দিতে হচ্ছে। এতে লোকসান হচ্ছে আমাদের। এ অবস্থা এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। এরপর আগের দামেই টিকিট পাওয়া যাবে।’

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘টিকিট নিয়ে কোনও নৈরাজ্য নেই। প্রকৃতপক্ষে বাসের চেয়ে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।’

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version