শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির সমালোচনা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা (এমপি) বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। শিক্ষার দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। এমপিওভুক্তির জন্য টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়।
রোববার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদ সদস্যদের অন্যান্য অভিযোগের জবাব দিলেও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছয়জন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বক্তব্য রাখেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ সবসময় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে থাকে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক, শিক্ষাক্রম ও আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা একই কর্মস্থলে পাঁচ-সাত বছর ধরে থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। নতুন কারিকুলাম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।
বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রশংসনীয়। তবে, কুড়িগ্রামের চিলমারীর কেউ যদি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিয়োগ পায়, তাহলে সে যোগদান করে না। পার্বত্য এলাকায় তো আরও সমস্যা। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগের পরেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই নিয়োগটি অঞ্চলভিত্তিক করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসারদের শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট এমপিদের সভাপতি হতে বারণ করলেন। বারবার এমপিরা এটা নিয়ে কথা বলেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন আপিল করবেন। আসলে এমপিদের সবাই অপমান করে। সবাই এমপিদের অসম্মান করতে খুব উৎসাহবোধ করেন। জানি না হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদৌ আপিল করেছেন কি না? আজ তিনি মন্ত্রী, কাল যদি কোনো কারণে মন্ত্রী না হন, তাহলে তার অবস্থাও আমার মতো হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানের পরিবর্তন হয়নি। আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৪৩টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, পাঠদান হয়নি পাঁচটিতে। পাঁচটি রুম ব্যবহার হয়। না হয় আরও পাঁচটিসহ ১০টি হলো বা ২০টি হলো। কিন্তু রুম ৪৩টি। এই যে অপব্যয়। আমার পাকা বাড়ি, পাকা পায়খানা কিন্তু খাবার নেই। এটা হচ্ছে আজকের শিক্ষার অবস্থা।
তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত হয় না। আবেদন গ্রহণও বন্ধ। এক বছর আগে যাদের এমপিওভুক্তির চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের পিয়ন চাপরাশির দু-একজনের বেতন হয়েছে, অন্যদের বেতন হয় না। হয়তো টাকা নেই। এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন টেবিলে যেতে হয়। ধাপে ধাপে টেবিল মানে ধাপে ধাপে দুর্নীতি। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ২০ থেকে ২৫ বছর পরে বেতন হচ্ছে। গ্রামের স্কুল-মাদ্রাসায় চারতলা ভবন করা হয়েছে। যারা এই পরিকল্পনা করেছে, তারা বাংলাদেশে বাস করেন না। তারা গ্রাম দেখেননি।’
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য