-->

চলমান কারফিউ,গরিবের পেটে লাথি

হেলাল সাজওয়াল
চলমান কারফিউ,গরিবের পেটে লাথি
  • রিকশার যাত্রী হাতেগোনা
  • বিক্রি বন্ধ হকারদের
  • ভ্যান চলছে না
  • বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

চলমান কারফিউ কিছুটা শিথিল হলেও সংকট কাটছে না। এখনো স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। এর সব চেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ঢাকায় রিকশার যাত্রী নেই বললেই চলে। হকারদের পণ্য বিক্রিও বন্ধ। ভ্যানগাড়ি চলছে না। আয় কমে যাওয়া কিংবা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটবে- সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় কথা হয় হকার মো. সজলের সাথে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই তিনি বের হয়েছেন পেটের তাগিদে। তিনি বিক্রি করেন টুথব্রাশ, মোবাইল ফোনের কাভার, নেইল কাটার ইত্যাদি। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো। লাভ হতো ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকার মতো। লাভ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তিনি থাকেন ফকিরাপুলের একটি মেসে। মাসে সিট ভাড়া ১৬০০ টাকা। খাওয়ার জন্য দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। বৃদ্ধ বাবা-মাকে মাসে কিছু টাকা পাঠাতে হয়। মাস শেষে সঞ্চয় থাকে না। এখন বেচা-বিক্রি বন্ধ। ফলে নিজে কীভাবে চলব এবং বাড়িতে টাকা পাঠাব- সেই চিন্তায় ঘুম হারাম।

জামালপুর জেলার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক থাকেন রাজধানীর শাহজাহানপুরে। তিনি ফার্নিচারের দোকানের ভ্যানচালক। ফার্নিচার বিক্রি হলে তিনি ডেলিভারি দেন। তিনি বলেন, মার্কেট বন্ধ। কোন কাজ নেই। আটদিন পর পূর্বের একটি অর্ডার ডেলিভারি দেয়ার জন্য এসেছি। মজুরি পাব ৫০০ টাকা। ভ্যান ভাড়া দিতে হবে ১০০ টাকা। চা-নাস্তায় খরচ হবে ৫০ টাকা। থাকবে ৩৫০ টাকা। এই টাকায় বাজার করতে হবে। এভাবে চললে না খেয়ে মারা যেতে হবে।

তিনি জানান, সংসারে তার ১ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। ঘরভাড়া মাসে ৬ হাজার টাকা। তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে কোনমতো সংসারটা চলে যায়। কিন্তু কারফিউয়ের কারণে আয় নেই। ফলে সংসার চালানো দুরূহ হয়ে গেছে।

ওমর ফারুকের বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনিও ফার্নিচারের দোকানের মাল ডেলিভারি দেন। তিনি জানান, স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। থাকেন খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায়। বাসা ভাড়া মাসে ৭ হাজার টাকা। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়। মার্কেট যদি খোলা না থাকে তাহলে কাজও থাকে না। ফলে রোজগার থাকে না। পড়তে হয় মহাবিপাকে। ধার-দেনাও পাওয়া যায় না।

বাসায় খাবার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন ইনকাম করি, প্রতিদিন খাই। ফলে আয় না থাকলে ভীষণ কষ্ট হয়।

রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় বাদাম বিক্রি করেন ফারুক হোসেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে থাকেন শান্তিবাগের ভাড়া বাসায়। কোটা আন্দোলনের সহিংসতার কারণে তিনি বাদাম বিক্রি করতে পারেননি। নেই সঞ্চয়। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে তাকে চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন পর আজ (শুক্রবার) দোকান নিয়ে বের হয়েছি কিন্তু বেচাকেনা খুব কম। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

তিনি বলেন, প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করতে পারলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হয়। এখন যে অবস্থায়, তাতে বিক্রিই হচ্ছে না ৫০০ টাকা। তাহলে লাভ কোত্থেকে আসবে? আগামী দিনগুলো নিয়ে ভীষণ শঙ্কায় আছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে না খেয়ে মরতে হবে। অন্যথায় বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামে চলে যেতে হবে।

রাজধানীর বিজয় নগরে ফুটপাতে চা-সিগারেট বিক্রি করেন মো. রানা। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন রামপুরায়। তিনি বলেন, শুক্রবার তার বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫০০ টাকা। লাভ হবে ৪০০ টাকার মতো। স্বাভাবিক সময় দিনে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা লাভ হয়। সংসারে তার খরচ আছে মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো। এভাবে চললে পথে বসতে হবে।

রিকশা চালক আবু সাঈদ থাকেন শান্তিবাগে। তিনি বলেন, নামাজের (জুমা) পরে বের হয়েছি। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মাত্র ২০০ টাকা ভাড়া মেরেছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সময়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকা রোজগার হয়ে যায়। কিন্তু এখন মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হয় কম। তাই ট্রিপ কম। ৪ জন ছেলে-মেয়ে নিয়ে এমনিতেই একজনের রোজগারে হয় না। স্ত্রী বেইলি রোডে মার্কেটে কাজ করেন। গণ্ডগোলের সময় বাসায় ফেরার পথে ছররা গুলি লেগেছে তার শরীরে। তাকে চিকিৎসা করতেও টাকা লাগছে। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চলতে হচ্ছে।

কষ্টে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ না খাওয়াইয়্যা রাখেন না।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version