-->
শিরোনাম
নৌপরিবহন অধিদপ্তর

একটি আইনের খসড়া প্রণয়নে গচ্চা সাড়ে ৩ কোটি টাকা

আশীষ কুমার দে
একটি আইনের খসড়া প্রণয়নে গচ্চা সাড়ে ৩ কোটি টাকা

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক (সমুদ্রগামী) নৌ চলাচল সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশকে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ ও উন্নয়ন করে একটি আইনে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেরিটাইম লেজিসলেশন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে।

নতুন আইনের খসড়া তৈরির জন্য একটি বেসরকারি কনসাল্টেন্সি ফার্মকে কার্যাদেশ দেয় অধিদপ্তর। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানটি যথাযথভাবে খসড়া তৈরি করতে পারেনি। নৌ অধিদপ্তরের হিসাব সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে খসড়াটি সম্পর্কে এমন নেতিবাচক মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে সমুদয় অর্থ অপচয় হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনের খসড়া তৈরির জন্য মেরিন কেয়ার কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করে নৌ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি অনভিজ্ঞ সত্ত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এজন্য মেরিন কেয়ার কনসালট্যান্টকে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে অধিদপ্তর। অথচ তাদের তৈরি খসড়াটি খুবই নিম্নমানের হয়েছে। প্রতিবেদনে নৌ অধিদপ্তরের ‘লাইট হাউস’ নামে পরিচিত জিএমডিএসএস ও ইন্টিগ্রেটেড, নেভিগেশনাল সিস্টেম স্থাপন প্রকল্পে ৭টি খাতে ১১ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।

নিরীক্ষায় আরো বলা হয়, যেখানে পরিবহন অডিট অধিদপ্তর ‘অডিট ম্যানুয়াল’ তৈরি করছে বিনামূল্যে এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের ‘বুক অব স্পেসিফিকেশন অ্যান্ড কোড অব প্র্যাকটিস’ নিজস্ব লোকবল দিয়ে বিনা খরচে সংশোধন ও উন্নয়ন করেছে, সেখানে দুটি ইংরেজি অধ্যাদেশকে বাংলায় অনুবাদ ও উন্নয়ন করে একটি আইনের খসড়া তৈরি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সরকারি অর্থের অপচয়ের শামিল।

নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে দুটি আলাদা অধ্যাদেশের অধীনে নৌ চলাচল ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উকূলীয় এলাকায় নৌ চলাচল ব্যবস্থা পরিচালিত হয় অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ (ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্সÑ আইএসও) ১৯৭৬-এর অধীনে। মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স (এমএসও) ১৯৮৩-এর অধীনে পরিচালিত হয় আন্তর্জাতিক (সমুদ্রগামী) নৌ চলাচল ব্যবস্থা। দুই অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এ দুটি অধ্যাদেশ ইংরেজিতে জারি করা হয়েছিল। সরকার দুটি অধ্যাদেশকে বাংলায় অনুবাদ করে ‘বাংলাদেশ বাণিজ্যিক নৌপরিবহন আইন’ প্রণয়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে আইনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মেরিন কেয়ার কনসালট্যান্টকে। প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের খসড়া তৈরি করলেও অধিদপ্তর তাদের পাওনা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন খসড়াটি এখন মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেভেলপমেন্ট অব মেরিটাইম লেজিসলেশন প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও পিসিআর (প্রজেক্ট কমপ্লিশন রিপোর্ট) দুটি ইংরেজি অধ্যাদেশের বাংলায় অনুবাদ ও উন্নয়ন, কনসাল্টেন্সি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্র এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেরিন কেয়ার কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ লিমিটেডকে অভিজ্ঞতার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। টেন্ডার ডকুমেন্টস-২৩.১৪ এ উল্লেখ রয়েছে, নৌ-সংক্রান্ত আইনের ড্রাফটিংয়ের কাজে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ফলে টেন্ডার ডকুমেন্টের শর্ত না মেনে কনসালট্যান্ট নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণ করে দুটি ইংরেজি অর্ডিনেন্সকে বাংলায় অনুবাদ ও উন্নয়ন করে একটি আইনের খসড়া তৈরির নামে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অযথা ব্যয় করা হয়েছে।

জানতে চাইলে নৌ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, অডিট আপত্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অডিট শাখা জবাব দিয়েছে। তবে এ আইনের খসড়া তৈরিকালে তিনি বর্তমান দায়িত্বে ছিলেন না। তাই ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিল পরিশোধের বিষয়ে তার ধারণা নেই।

জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, রাষ্ট্রের টাকা এভাবে অপচয় করা উচিত নয়। দুটি অধ্যাদেশ বাংলায় অনুবাদ করে একটি আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিল দেওয়া বিষ্ময়কর ঘটনা। অডিট আপত্তিটি সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত হলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শুনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version