-->
শিরোনাম
ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে নাশকতা

মেট্রোরেল যাত্রীরা ত্রি-সংকটে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মেট্রোরেল যাত্রীরা ত্রি-সংকটে

রাজধানীর উত্তরা-মিরপুর থেকে নিয়মিত কারওয়ানবাজার-মতিঝিল যাতায়াতকারী কর্মজীবীদের দুঃসহ যানজট আর দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়েছিল মেট্রোরেল। ২০২২ সালে চালুর পর এই পথে নিত্যদিনের যাত্রীদের চাপ যেমন ক্রমাগত বাড়ছিল, তেমনি এর বিপরীতে যাত্রীসংকটের কারণে বাসের সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে আসছিল। এতে কালো ধোঁয়া নির্গমণকারী লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল সীমিত হওয়ায় ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রাও পর্যায়ক্রমে কমছিল।

কিন্তু অশুভ শক্তির ঘৃণ্য রাজনীতির নীলনকসায় নজিরবিহীন নাশকতার কবলে পড়ে রাজধানীবাসীর সেই আরামদায়ক মেট্রোরেল চলাচল এখন বন্ধ। তাই কর্মজীবীরা বাধ্য হয়ে আগের সেই দুর্ভোগ মোকাবিলা করে নিয়মিত উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা যাতায়াত করছেন। তারা এখন পড়েছেন ত্রিমুখী সমস্যায়।

তবে মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় এই পথের আড়াই লাখের বেশি যাত্রীকে ফিরে যেতে হয়েছে দেড় বছর আগের সেই ভোগান্তির জীবনে। ২০২২ সালে এই রেল চালুর পর যাত্রীস্বল্পতার কারণে বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই রেলযাত্রীদের এখন বাসেই চলাচল করতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় যানবাহন কম থাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগের মাত্রা দেড় বছর আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মেট্রোরেল চালুর পর দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বস্তির যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন; পুরনো অভ্যাসে ফিরতে তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না; তার সঙ্গে যাতায়াত খরচ ও সময়Ñ দুটোই বেড়ে গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের একপর্যায়ে অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে একটি অশুভ শক্তি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে মেট্রোরেলপথের নিচে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে পুলিশবক্সে আগুন দেওয়া হয়। পরেরদিন সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোস্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও ১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা চালানো হয়। এর ফলে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ দুটি স্টেশন মেরামত করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক যন্ত্রপাতিই মেরামতযোগ্য অবস্থায় নেই। এগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে। গতকাল রোববার মেট্রোরেলের পল্লবী স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, কর্মস্থলগামী যাত্রীদের অনেকে দৌড়ে বাসে উঠছেন, কেউ বাইক রাইডারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন, আবার কেউ অটোরিকশায় করে যাচ্ছেন। যাত্রীদের মধ্যে সময় মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারা নিয়েও অস্থিরতা দেখা গেছে। কারফিউ শিথিলের সময়সীমা এবং অফিস-আদালতের কার্যক্রমের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার রাস্তায় এদিন সকাল থেকে ঢাকার যানবাহনের সংখ্যা ও যানজটও অনেক বেড়ে যায়।

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মতিঝিলে যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী তুষার কান্তি বণিক। তিনি কয়েকজন বাইক রাইডার এবং অটোরিকশা চালকের সঙ্গে দর কষাকষি করলেন। বাইক রাইডাররা তার কাছে ভাড়া চাচ্ছিল ৩৫০ টাকা, আর অটোরিকশা চালক ৪০০ টাকা। পরে তিনি ৩০০ টাকায় বাইকে করে কর্মস্থলে যান।

তুষার কান্তি বণিক বলেন, মেট্রোরেলের কারণে শুধু ওই চাকরিটা করি, এখন অফিসে সময় মতো পৌঁছাতে পারি না; জ্যামে বসে থাকতে হয়Ñ এমন পরিস্থিতিতে আছি। আগে বাসা থেকে ৩০-৪০ মিনিট আগে বের হলে হতো। এখন অন্তত আড়াই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হচ্ছে।

শেওড়াপাড়া থেকে তেজগাঁওয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাসকিনা ইয়াসমিন। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তিনি শেওড়াপাড়া স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চেপে ফার্মগেট গিয়ে নামতেন; এরপর বাকি পথ যেতেন রিকশায়। মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় এখন তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে তার দৈনন্দিন যাতায়াত খরচ পাঁচ-ছয়গুণ বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী তাসকিনা বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ হওয়ার পর তাকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাসা থেকে বের হলেই মেট্রো স্টেশন; আধঘণ্টা আগে বের হলেই অনায়াসে গন্তব্যে পৌঁছে যেতাম। এখন জ্যামে বসে থাকতে হয়। ৪০ টাকার জায়গায় খরচ হচ্ছে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version