শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে রাজধানীর সব সড়কে মিছিল নিয়ে উল্লাস করছেন লাখো মানুষ। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর সব সড়কে মিছিল নিয়ে উল্লাস করছেন লাখো মানুষ। সোমবার সকালে যাত্রাবাড়ী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাড্ডা, উত্তরা মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়। পরে বেলা দেড়টার দিক থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে।
গতকাল দুপুরের দিকে শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিতে থাকেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে সেখানে দল বেঁধে মানুষ আসছেন। সবাই স্লোগান দিচ্ছেন। মিরপুরে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। মিরপুরের পল্লবী, ১১ ও ১১ নম্বর থেকে মিছিল নিয়ে মানুষ ১০ নম্বর সেকশনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা আগারগাঁওয়ের দিকে রওনা দিয়েছেন। পরে তারা ফার্মগেটের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে বনানী অভিমুখে আগিয়ে আসছেন আন্দোলনকারীদের একটি দল। সেখানে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয় মানুষ রয়েছেন। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিক্ষোভকারীরা বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় জড়ো হওয়া হাজারো মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের কর্মীদের রাস্তায় এসে নাচতে দেখা গেছে। অসুস্থ নারীরা হুইলচেয়ারে বেরিয়ে এসেছেন। এই এলাকার তরুণ-তরুণীদের রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশায় যেতে দেখা গেছে। তাদের হাতে ও মাথায় পতাকা।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা ফজলে রাব্বি বলেন, বিশ্বাস করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। ধানমন্ডির বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, কী যে আনন্দ লাগছে, বোঝাতে পারব না।
সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জিতিলো রে জিতিলো’, ‘ছাত্র সমাজ জিতিলো’, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ভুয়া ভুয়া’সহ সরকার পতনের নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাকার উত্তরায় বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা আশেপাশের গলি থেকে মূল সড়কের দিকে আসতে থাকে। এসময় উত্তরা আজমপুর মূল সড়কে তারকাঁটার ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তায় আটকে রাখে সেনাসদস্যরা। মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকে আহ্বান জানায়। প্রায় আধাঘণ্টা পাশের সড়কে বিক্ষোভ করার পর একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মূল সড়কে উঠে আসে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সেনা সদস্যদের ব্যারিকেড তুলে নেয়ার আহ্বান জানায়। বেশ কিছুক্ষণ স্লোগান চলার পর সেনাসদস্যরা রাস্তা থেকে সরে যায়। পরে উত্তরা আজমপুর থেকে রাজলক্ষী পর্যন্ত মূল সড়কে কয়েকহাজার বিক্ষোভকারী মিছিল করতে থাকেন। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একের পর এক মিছিল যোগ দিতে থাকলে তারা বিমানবন্দরের দিকে এগুতে থাকেন। দুপুর একটার দিকে হাজার হাজার বিক্ষোভাকারীদের মিছিল শ্যাওড়া হয়ে বনানীর দিকে এগুতে দেখা যায়। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাড্ডা, উত্তরা মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। পরে বেলা দেড়টার দিক থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে।
খুলনা : শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশছাড়ার খবরে উল্লাসে মেতেছে খুলনার মানুষ। বিকাল ৩টার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ সড়কে নেমে আসে। শিববাড়ি মোড় মুহূর্তেই জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শহর। ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও রাজপথে নেমে আসেন।
শিক্ষার্থী শান্ত বলেন, ‘আন্দোলনের সুফল পাওয়া গেছে। আমরা বিজয়ী। ভাইদের রক্তের দাম পাওয়া গেছে। এখন এটাকে ধরে রেখে ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ গড়তে হবে। যে বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন।’
মেডিক্যাল শিক্ষার্থী রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখন উৎসব চলছে। কিন্তু এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ঘটছে। সকলকে সহজ হওয়া দরকার। বিচ্ছিন্নতা রোধে ছাত্রদেরই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
চট্টগ্রাম : বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পথে পথে সর্বস্তরের জনতা আনন্দ মিছিল করছেন। পাশাপাশি চলছে মিষ্টি বিতরণ। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসেন সব জনতা। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টা থেকে নগরীতে আনন্দ মিছিল বের হয়। নগরীর মুরাদপুর, জিইসি, ষোলশহর, কাজির দেউড়ি, জামালখান, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, চকবাজার, রাস্তার মাথাসহ প্রতিটি অলি-গলিতে এ আনন্দ মিছিল চলছে। চলছে মিষ্টি বিতরণও। এদিকে এক ঘণ্টার মধ্যে দোকানের সব মিষ্টি শেষ হয়ে যায়।
দোকানিরা জানান, এমন পরিস্থিতি হবে আগে জানা ছিল না। নগরীর সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়েছে নিউমার্কেট চত্বরে। সেখানে বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি চলছে মিষ্টি বিতরণ। এদিকে, নগরী ছাড়াও চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় ও ইউনিয়নেও চলছে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ।
সিলেট : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে সিলেটে রাজপথে নামেন উচ্ছ্বসিত জনতা। ভারী বর্ষণেও জনতা সেনাবাহিনীর সামনে রাস্তায় নেমে আসে। তারা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এছাড়া নগরের মিরের ময়দান এলাকায় এক নারীকে মিছিলকারীদের মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে শেখ হাসিন পদত্যাগের। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের আগে সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এছাড়া নগরের মিরের ময়দান এলাকায় এক নারীকে মিছিলকারীদের মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরের মিষ্টির দোকানগুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানিরা জানিয়েছেন, একেতো অসহযোগ আন্দোলনের কারণে দোকান বন্ধ ছিল। যে কারণে মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে সীমিত। এ অবস্থায় সিলেটের বিভিন্ন দোকানে গিয়েও মিষ্টি না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন আন্দোলনকারীরা।
নগরের চৌহাট্টায় আন্দোলনকারীদের এক ফাহিম আহমদ বলেন, দুপুর ২টায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন শুনেই রাস্তায় নেমে পড়ি। এরপর বাকিটুকু ইতিহাস। বৃষ্টির মধ্যেও আমরা উচ্ছ্বাসিত। আমরা রাস্তা থেকে সরিনি।
সরেজমিন নগর ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শান্তভাবে সেনাবাহিনীর টহল দিতে দেখা গেছে। পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও ছিল নিস্প্রভ। এমন অবস্থায় দুপুর ২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, মীরাবাজার, আম্বারখানা পয়েন্টসহ সারা নগরজুড়ে জনতার ঢল নেমেছে।
লক্ষ্মীপুর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন এই খবরে লক্ষ্মীপুরে মিছিল করছে সাধারণ জনগণ। পাশাপাশি চকবাজার জামে মসজিদ এলাকায় সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছেন। গতকাল সোমবার বিকেল ৪ টার দিকে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হন তারা।
স্থানীয়রা জানান, মিছিল থেকে লক্ষ্মীপুর শহরে আওয়ামী লীগের ব্যানার-ফেস্টুন ভাঙচুর করা হয়। উত্তর তেমুহনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ব্যানারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো শহর জুড়ে মোটরসাইকেলে চড়ে আনন্দ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষদের।
টাঙ্গাইল : আনন্দ মিছিল করেছে টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাজ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও এ আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। প্রথমে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বর ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বান্দরবান : বান্দরবানে অনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। বিকেলে শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ আনন্দ মিছিল করা হয়। শেখ হাসিনার পতনের খবরে শিক্ষার্থীরা শহরের পায়রা চত্বরে রং খেলায় মেতে ওঠেন। অনেকেই উঁচু স্থানে উঠে জাতীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়। পুরো শহর উৎসবে মেতে ওঠে।
ভোলা : জাতীয় পতাকা নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এসময় তারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে স্লোগান দিয়ে শহরের সদর রোড বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে বাংলাস্কুল মোড়ে এসে জড়ো হন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য