সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী বর্তমানে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে। ওই সব হিসাব থেকে কোনো টাকা তুলতে পারবে না।গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছে। যে সকল কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।”
সরকার জানতে চাইলে তার নাম এবং এ বিষয়ে সব তথ্য ও তথ্যসূত্র দেওয়া হবে বলে জানালেও পরে ইফতেখারুজ্জামান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে সেই ‘মন্ত্রীর’ নাম জানান। তিনি হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান। পরে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন সাইফুজ্জামান।
এ ছাড়া, ২০১৩ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্থাবর সম্পত্তি ছিল দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এখন তার নামে সম্পত্তি আছে ১০ কোটি ৯ লাখ টাকার। ১০ বছরে স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই সময়ে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে ১২ গুণের বেশি। সাইফুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের সংসদ সদস্য। একই আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) গুলশানে ইউসিবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী। ওই সময় তারা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ এবং ব্যাংকটির নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাবা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। শুরু থেকে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ হাসেম। তারা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উভয় পরিবারের সদস্যরাই ব্যাংকটিতে যুক্ত ছিলেন ও নেতৃত্ব দেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের সদস্যদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামান। তবে রুখমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিচালনা করেন, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
মন্তব্য