-->
শিরোনাম

পলাতক নেতারা কর্মীরা ছন্নছাড়া বড় দুর্যোগে আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন
পলাতক নেতারা
কর্মীরা ছন্নছাড়া বড় দুর্যোগে আওয়ামী লীগ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ নেতারা। কর্মীরা ছন্নছাড়া। নেই সংগঠিত করার নেতৃত্ব। নেতার অপেক্ষায় আছেন দিশেহারা কর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কর্মী ও দলীয় লোকজনের অভাব নেই। মাঠে নামতেও মানসিকভাবে প্রস্তুত তারা। কিন্ত নেই সমন্বয়কারী। সব পর্যায়ের দলীয় কমিটিতে পদ-পদবি কেনাবেচার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অধিকাংশ কমিটি অপূর্ণাঙ্গ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাও অনেক। এমন পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। এদিকে, জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টর সরকারি ছুটি বাতিল করেছে সরকার। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ফলে সারাদেশে ছন্নছাড়া নেতাকর্মীদের পক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয়ভাবে শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক পদ পরিবর্তনে দৃশ্যমান অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমন অবস্থায় খোঁজ মিলছে না আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও প্রতাপশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমপিদের। শুধু কেন্দ্রীয় নেতারা নন, দলটির বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারী নেতারাও আত্মগোপনে আছেন। অধিকাংশ দলীয় নেতা ও এমপি দেশে অবস্থান করলেও বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। কর্মী ও সমর্থকদের সমন্বয় করার নেতা নেই। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিদায়ী সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম ভোরের আকাশকে জানান, সংসদ সদস্য হলেও হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং। তিনি নিজে হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তারই আশীর্বাদপুষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হলেন ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তারা দুজনই আত্মগোপনে আছেন। তাই দলীয়ভাবে সংগঠিত করার নেতা নেই।

ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধাণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ^াস বাবুল ভোরের আকাশকে জানান, নেত্রীর দেশত্যাগের পর পরই উপজেলা সদরে অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু সীমিত সংখ্যক কর্মী নিয়ে বিশাল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আত্মগোপনে গেছেন। আমার একার পক্ষে সাতটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান প্রিয়তোষ বিশ^াস।

ছন্নছাড়া কর্মীরা দলটির কর্মী ও সমর্থকেরা বলছেন, নেতৃত্বদাকারী নেতারা আত্মগোপনে চলে গেলেও এলাকা ত্যাগ করেননি কর্মী ও সমর্থকেরা। কিন্তু নেতার অভাবে তারা হয়ে পড়েছেন ছন্নছাড়া। সংগঠিত হতে পারছেন না।

প্রতিটি এলাকায় দলবদ্ধভাবে অবস্থান, চলাফেরা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ভয়ভীতি প্রদশন করছেন তারা। একতাবদ্ধ ও উজ্জীবিত বিএনপিকে মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু নির্দেশনা ও সমন্বয় করার নেতা নেই।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাশেম আলী ভোরের আকাশকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু তাদের কেউ প্রকাশ্যে আসছেন না। সংগঠিত করার কোনো খবর নেই। ১৫ আগস্ট পালন করতে দলীয় কর্মসূচির বিষয়েও আলাপ হয়নি বলে জানান মো. কাশেম আলী।

নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. শফিক আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, দুর্যোগে নেতারা পালিয়ে যায়, কর্মীরা বিপাকে পড়েÑ এমন চিত্র অনেক বার প্রত্যক্ষ করেছি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বড় নেতাদের হদিস নেই। নিজেরা আত্মগোপনে গিয়ে ফোন করে কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের এমন ডাকে সাড়া মিলছে না বলে জানান শফিক আহমেদ।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া ভোরের আকাশকে জানান, গোপন জায়গায় বসে নির্দেশনা দিলে চলবে না। নিজে প্রকাশ্যে মাঠে দাঁড়িয়ে অন্যদের আহ্বান করতে হবে। কিন্তু নেতাদের খবর নাই। কর্মীরাও নিজেদের বাড়িতে বসে আছেন। তবে নেতাদের ডাক পেলে কর্মসূচিতে যোগ দিতে আমরা প্রস্তুতি বলে জানান মো. ইব্রাহিম মিয়া।

দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ত্যাগী দলীয় কর্মীরা গত ১৫ বছর ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে। তীব্র দলীয় কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের শুরুতে আহ্বান জানিয়েও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি হাই কমান্ড। চলমান কোন্দলের ধরন খুবই অস্বাভাবিক ও স্থায়ী রূপ নিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভাগীয়, মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কাউন্সিল ও কমিটি গঠনের সময় থেকেই তীব্র হতে থাকে কোন্দলের মাত্রা। আর জাতীয় নির্বাচনে এসে কোন্দল বড় দুটি গ্রুপে ভাগ হয়-দলীয় মনোনয়প্রাপ্ত প্রার্থী ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে এসে সেই দুটি গ্রুপ হয়ে গেছে বহুধাবিভক্ত। কেউ কাউকে মানছে না-এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে একাধিকবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ফলাফল শূন্য। সরকার পতনের পর নেতাকর্মীদের ছন্নছাড়া হওয়ার পেছনে তীব্র দলীয় কোন্দলও অন্যতম বড় কারণ।

জাতীয় শোক দিবস আজ :আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে কলাবাগান মাঠ হয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত শোক র‌্যালি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া আওয়ামী লীগের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানা গেছে।১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো হলো, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল। সকাল ৯টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে কলাবাগান মাঠ হয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত শোক র‌্যালি।

এর পর সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। দুপুর ১২টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে (রাত ১২:০১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ¦ালন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version