-->
শিরোনাম

জুলাই মাসে সড়কে ঝরল ৬৭৯ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই মাসে সড়কে ঝরল ৬৭৯ প্রাণ

গত জুলাই মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৫২টি। এই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৮৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৭৯ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৩, শিশু ৭১ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৭৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যাতে নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ০৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ছয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় আটজন নিহত, ১১ জন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৯টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫৬ জন, বাসের যাত্রী ২৬ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর আরোহী ৩৩ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসÑ জিপ আরোহী ২০ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-লেগুনা) ১০৩ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু) ১৪ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ২১ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬১টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৮৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ৬২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৬টি শহরের সড়কে এবং ৪টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ১০৬টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯১টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৬টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ২৬টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৩টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ড্রামট্রাক, পুলিশভ্যান, ট্যাঙ্ক লরি, রোড রোলার, ঢালাই মেশিন গাড়ি ২৬ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, মিশুক) ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু, টমটম, মাহিন্দ্র) ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮০৪টি। যেখানে বাস ৮৬, ট্রাক ১৩৫, কাভার্ডভ্যান ২৮, পিকআপ ২১, ট্রাক্টর ৫, ট্রলি ৪, লরি ২, ড্রাম ট্রাক ৫, পুলিশভ্যান ৩, ট্যাঙ্ক লরি ৪, রোড রোলার ১, ঢালাই মেশিন গাড়ি ১, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ১৮, অ্যাম্বুলেন্স ২, জীপ ৩, মোটরসাইকেল ১৮৩, থ্রি-হুইলার ১৮৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-মিশুক। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৬২ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র), বাইসাইকেল-রিকশা ২০ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১৫টি।সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সকালে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, দুপুরে ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বিকালে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং রাতে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, প্রাণহানি ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১৪টি দুর্ঘটনায় ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ২০টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, বরগুনা ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এই তিনটি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বিজিবি সদস্য একজন, পুলিশ সদস্য একজন, সেনা সদস্য দুজন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, পল্লী চিকিৎসক এক জন, সাংবাদিক দুজন, প্রকৌশলী দুজন, বন প্রহরী দুজন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ছয়জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, মসজিদের ইমাম দুজন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১২ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ১৭ জন।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version