সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নীরবতা বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। হাইকমান্ডের নির্দেশনায় নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। কারো উস্কানিতে জড়ানো যাবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আরেকটু সময় নিয়ে কর্মসূচি দেবে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকার পতন এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দেশত্যাগে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। খোঁজ মিলছে না আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা ও প্রতাপশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমপিদের। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার পতন হওয়ার বিষয়টি চিন্তাও করতে পারেননি তারা। গণজাগরণ ও বিরোধীদের আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। চলে যান আত্মগোপনে। বর্তমানে পর্যবেক্ষণ করছেন চলমান পরিস্থিতি। দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা অব্যাহত রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। কেন্দ্রীয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ দলীয় নেতা নানাভাবে আক্রান্তের র্শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ দলীয় নেতা ও এমপি দেশে অবস্থান করলেও বাসাবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থান বেছে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা দেশেই রয়েছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর দেশের স্থানীয় সরকারের বিশেষ করে সিটি ও পৌর মেয়র, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদে আওয়ামী লীগের লোকজন অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু গত দুদিনে তাদেরকে সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ ও সুবিধাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে দলীয় শক্তি হয়েছে খর্ব।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আমরা একটু সময় নিচ্ছি। কীভাবে এগোনো যায়, তা নিয়ে ভাবছি। আমাদের পরবর্তী কর্মপদ্ধতি বা পদক্ষেপ কী হতে পারে, সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি আমাদের নেতাকর্মীরা আর যেন কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। কারণ, এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। নতুন করে আমাদের কোনো নেতাকর্মী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য আমরা কিছুটা সময় নিচ্ছি
দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কথা হয়েছে। সব নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য, সাহস দেওয়ার জন্য, মনোবল ধরে রাখার জন্য আমাদের বলা হয়েছে। যেন নতুন করে আর ক্ষয়ক্ষতি না হয়। এখন সেটার ওপরে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা এখন কোনো কর্মসূচিতে যেতে চাই না। আপাতত কয়েক মাস আমাদের নিশ্চুপ থাকতে হবে। একটা বিপ্লব হয়েছে, এত তাড়াতাড়ি প্রতিবিপ্লব করা সহজ না। আগে আমাদের সংগঠিত হতে হবে। দলের নেতাকর্মীরা আমার মতো আত্মগোপনে আছেন। আমাদের নেতা বাহার ভাইও গোপনে রয়েছেন। এখন সক্রিয় হলে মামলা-হামলার শিকার ছাড়া আর কিছু হবে না।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, আপাতত নীরব থাকাই শ্রেয়। কেন্দ্রীয় নেতারাও আমাদের সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সময় নিয়ে কর্মসূচি দেবে। নেতারা বলেছেনÑ আপাতত নিরাপদ স্থানে থাকতে।
মামলা ও হামলা থেকে রক্ষা পেতেই এখন নেতাকর্মীদের মাঠে না থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত ১৫ অগাস্ট শোক দিবস উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান করা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক কর্মীরা মোমবাতি প্রজ্বলন শেষ করার পর তাদের ওপর চড়াও হয় একটি গোষ্ঠী। পরদিন ৩২ নম্বরের আশপাশে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে না পারলেও সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়।
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বিদায়ী সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, পরিস্থিতির কারণে নীরবতায় আছি। দলীয়ভাবেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান সাবেক সংসদ সদস্য।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য