-->
শিরোনাম

পানিবন্দি লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার

ভোরের আকাশ ডেস্ক
পানিবন্দি লাখো মানুষ
চরম দুর্ভোগের শিকার

টানা প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলার নীচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে ২০০টি গ্রাম; খাগড়াছড়িতে ৩০টি এবং কক্সবাজারে ১০টি গ্রাম ডুবে গেছে। এতে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। খাগড়াছড়িতে আড়াই শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। কিছু এলাকায় সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। শুকনা খাবারও সরবরাহ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

নোয়াখালী থেকে এ আর আজাদ সোহেল জানান, নোয়াখালীতে ফেনীর মহুরী নদীর পানি ঢুকছে। এতে নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এদিকে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত জেলা আবহওয়া অফিস রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে নয়টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ নয়টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এছাড়া নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছে, জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করায় মানুষজন ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, অরেক ঘরে হাঁটু পানি, রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে রান্নাও করতে পারেনি অনেকে। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে অনেক শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জেলার ৭টি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ফেনীর মহুরী নদীর পানি নোয়াাখালী ঢুকছে। এরপর মহুরী নদীর পানি লক্ষ্মীপুর হয়ে নেমে যাবে। পানি এজন্য বাড়বে। সকালে বিষয়টি আমাকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বেশি প্লাবিত হওয়াতে নোয়াখালীও প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রথমে নোয়াখালীেতে ছিল জলাবদ্ধতা। এখন যে অবস্থা তাতে পানি নামার কোন সুযোগ নেই। মহুরী নদী থেকে পানি আসছে। যারা বন্যায় আক্রান্ত তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি বৈঠক ডাকা হবে।

ফেনী থেকে শেখ আশিকুন্নবী সজীব জানান, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। এই তিন উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তা-ঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ গেছে ভেসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা গতকাল বুধবার দুপুরের মধ্যেই কুমিল্লা থেকে স্পিডবোট নিয়ে বন্যা দুর্গত স্থানে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পরশুরামে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে।

কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। ফায়ার সার্ভিসও উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিন উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে ও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। ২ জুলাই থেকে এই অঞ্চলে এবারসহ তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা বন্যায় বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবার বাঁধের সেই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তিন উপজেলায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। রান্নাঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকে রান্নাও করতে পারছেন না।

পরশুরাম ইউএনও আফরোজা হাবিব শাপলা দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি এবং ভাঙনের স্থানগুলো দিয়ে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পরশুরাম উপজেলায় পৌরসভা এবং তিন ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ১০০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ পরিবারকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুদ আছে।

ফুলগাজী ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বহু বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে নতুন ফাটল না দেখা দিলেও আগের ফাটল দিয়ে এবং বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ফেনী-বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলগাজী ও পরশুরাম অংশ প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার বেশীরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড কাজ করছে।

এদিকে, ফেনী জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধারে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি)। বিজিবি এক বিবৃতিতে জানায়, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনী জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া এবং ফুলগাজী উপজেলার প্রায় শতাধিকের উপরে গ্রাম প্লাবিত হয়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিজিবি নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃতদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি শুকনা খাবার বিতরণ করছে।

বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিজিবি উদ্ধার ও অন্যান্য সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলেও জানানো হয়েছে।

খাগড়াছড়ি থেকে মো. মাইন উদ্দিন জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। ফলে সাজেক বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় আড়াইশ পর্যটক। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম। মঙ্গলবার বিকাল থেকে কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ সাজেক সড়কের একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও এখনও ঘরে ফিরতে পারছে না পরিবারগুলো। নদীর পানি বাসা বাড়ি থেকে নেমে গেলেও এখনও মেঘলা আকাশ নানা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় কাটাচ্ছের চেঙ্গী নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ দেয়া পৌর একালাকার ১২ মেট্রিকটন খাদ্যশস্যের শুকনো খাবার পৌছানো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্বারে দ্বারে। সকালে এ খাদ্যশস্য জনপ্রতিনিধি ও বন্যা কবলিতদের মাঝে তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, সদ্য পৌর প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়া স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা।

বুধবার সকাল থেকে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলে কিছু কিছু পরিবার ঘরে ফিরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা যায়। টানা ৪র্থ বারের মত বন্যার কবলে পরা কৃষকদের ফের পলিকাদা ও পাহাড়ের ঢলে নষ্ট হয়েছে অনেক শাকসবজিসহ ধানক্ষেত। নষ্ট হওয়া বাসাবাড়ির আসবাবা পত্র ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে চেষ্টা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এদিকে মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরুং কবাখালি ইউনিয়ন ও জেলা সদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনও পানিবন্দী রয়েছে।

বাঘাইছড়ি ইউএনও শিরিন আক্তার জানান, সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত ২৫০ জন পর্যটক। তারা আজকে ফিরতে পারবেন না। খাগড়াছড়ির পৌরসভার প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বন্যাদুর্গতদের শুকনো খাবার ও খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। মাইনী নদীর পানি না কমায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এখনো মেরুং বাজার পানির নীচে।

কক্সবাজার থেকে এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন জানান, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে এসব গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৬ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৫ একর ফসলি জমি। পানির তোড়ে দুটি খালের চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে ঢুকছে পানি। তলিয়ে গেছে বেশ কিছু ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সোমবার পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের মালগারা, আলেকদিয়া পাড়া, বটতলী, হাবির পাড়া, সোনাইয়া কাটা, শিলখালী ইউনিয়নের মাঝের ঘোনা, জারুলবনিয়া এবং পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতাচুড়া কালার পাড়াসহ ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার মানুষ।

শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ইউনিয়নের প্রায় ১০টি ঘরের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নামতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, টইটং ইউনিয়নের ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তাতে অন্তত ২০০ ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ডুবে গেছে বেশ কিছু পুকুর ও মাছের ঘের।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এরই প্রভাবে গত চারদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে কক্সবাজারে।

শিলখালী ইউনিয়নের কাছাড়িমোড়া ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ বলেন, টানা কয়দিনের ভারী বর্ষণে অসংখ্য বীজতলা ডুবে গেছে। অঙ্কুরোদগমের আগেই কিছু বীজে পচন ধরেছে। নতুন করে বীজ কিনে চাষবাসের সামর্থ্য অনেকের নেই। তাই চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় চাষীরা। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাতেই বৃষ্টি হয়েছে ৩৫ মিলিমিটার।

এমন বৃষ্টিপাতের কারণে টইটং ইউনিয়নের প্রায় একশো ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী সাহাব উদ্দিন। পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে ৮টি রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের ৬ হাজার বাসিন্দা। ইউএনও রাস্তাগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে তা করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। টইটংয়ে অন্তত ৪টি পয়েন্টে পাহাড়ি ছড়ার বাঁধ ভেঙে গেছে বলে জানান পেকুয়া ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করার কথা আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দী পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান জানান, ২০ আগষ্ট সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও গত ২/৩ ধরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হলে শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে হাঁটু থেকে কোমড় সমান বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ করে দিচ্ছে দোকান-পাট। নগরীর প্রধান বানিজ্যিক এলাকা চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে এলাকা, সরকারি কর্মাস কলেজ এলাকা, দেওয়ান হাট, মুনসুরাবাদ, আসমা খাতুন চসিক কলেজ এলাকা, পাঠানটুলী, ডবলমুরিং, মাদার বাড়ি বাংলা বাজার এলাকা, বন্দরের সল্টগোলা ক্রসিং, ঈশান মিস্ত্রী হাট কোরবান আলী শাহ পাড়া, ২ নং সাইট এরিয়া, ইপিজেডের দক্ষিণ হালিশহর নিউ মুরিং, বন্দরটিলাস্থ নয়াহাট, সিমেন্ট ক্রসিং, আকমল আলী রোডস্থ বেড়ীবাঁধ এলাকা, নারিকেল তলাস্থ হিন্দু পাড়া, হাজী নূর গনি পাড়া, আলী শাহ পাড়া, মাদ্রাজী শাহ পাড়া, পতেঙ্গার খেজুর তলা, চরপাড়া, নাজির পাড়া, পশ্চিম হোসেন আহমদ পাড়া, হাদি পাড়া, দক্ষিণ পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকা, বিজয় নগর, চৌধুরী পাড়া, দাইয়া পাড়া, মধ্যম পাড়া, মাইজ পাড়া, কাঠগড় মুসলিমাবাদ জেলে পাড়া এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকা ডুবে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আশরাফুল ইসলাম সুমন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার সকাল থেকেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় আখাউড়া স্থলবন্দরে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনেও পানি প্রবেশ করায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, সকালে বন্দরে কয়েকটি মাছের পিকআপ ভ্যান এসেছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে বড় ট্রাকগুলো আসতে পারেনি। এর ফলে রপ্তানি কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ইমিগ্রেশনের কার্যক্রমও সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে মো. নজরুল ইসলাম দিপু জানান, লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি গ্রাম। এতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়িসহ ফসলি জমি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চর মার্টিন, করইতলা ও চর লরেঞ্চ গ্রামগুলোর মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে মেঘনার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ ও মতাব্বর হাটসহ উপকূলীয় গ্রামগুলো। জোয়ার আসলে চৌধুরী বাজার থেকে নাছিরগঞ্জ সড়কটির অধিকাংশ পানির নিচে চলে যায়। এতে যাতায়াতে করা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভাটা পড়লে যাতায়াত করতে হয়। অতি জোয়ারের পানিতে মাছের ঘের ভেসে গেছে। মেঘনা উপকূলে বেড়িবাঁধ না থাকায় এসব অঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে ‘রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে’র জন্য ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। কাজের ধীর গতির কারণে বাঁধ নির্মাণ এখনো সম্পন্ন হয়নি। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা হবে বলে আশা স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক মিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। পূর্ণিমার প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় আরও অন্তত তিনদিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version