-->
শিরোনাম

ভাইরাল হওয়া শিশুর ছবি নিয়ে যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাইরাল হওয়া শিশুর ছবি নিয়ে যা জানা গেল

টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানির কারণে দেশের ৯টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্দশার চিত্র সামনে আসছে। চলমান বন্য পরিস্তিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় এসেছে এক শিশুর ছবি। ছবিটি শেয়ার দিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন অনেকে।

ভাইরাল ছবিটিতে দেখা গেছে, এক শিশু গলা পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে আছে। তার কপালে ভাঁজ এবং অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও ওই ছবি শেয়ার করে বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন।

ছবিটি পোস্ট করেছেন স্বয়ং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ড. আসিফ নজরুল। ভাইরাল হওয়া শিশুর ছবি নিজের ভ্যারিফায়েড পেজ থেকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘সবাই পাশে দাঁড়াই।’

ছবিটি নিয়ে মতামত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। তিনি তার ফেসবুকে ছবিটি সম্পর্কে যা জানিয়েছেন তা হুবহু নিচে দেওয়া হলো।

ছবিটি নিয়ে অনেকে জানতে চেয়েছেন- সত্যিকারের ছবি নাকি এআই জেনারেটেড। প্রথমত, কোনো ইমেজ আএই জেনারেটেড কিনা তা এখনো কোন টুল ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলার সুযোগ নেই। টুলগুলোর দেওয়া ফলাফল করোবোরেটিং এভিডেন্স হিসেবে রাখা যায় শুধু। আমি ৩টি এআই ডিটেক্টর টুলে ছবিটি ট্রাই করে ৩ ধরনের ফলাফল পেয়েছি। একটিতে দেখিয়েছে ছবিটি ৯১ শতাংশ এআই জেনারেটেড।

অন্যটিতে ৪০ শতাংশ এবং একটিতে দেখাচ্ছে ‘লাইকলি হিউম্যান মেইড’। ছবিটির অরিজিনাল ভার্সন পেলে হয়তো এই ভিন্নতর ফলাফল হতো না। কোনো এআই জেনেরেটেড ছবির অরিজিনাল ভার্সন ডিটেক্টর টুলে চেক করলে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কনক্লুসিভ ফলাফল পাওয়া যায়। (কোন ছবি একাধিক টুলের প্রতিটিতে ৭০ শতাংশের বেশি আইএই জেনারেটেড দেখালে আমরা সেটাকে কনক্লুসিভ ফলাফল হিসেবে গ্রহণ করে থাকি)।

তিনি আরো জানান, কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে, বুঝাই যাচ্ছে শুধু টুল দিয়ে এআই জেনারেটেড কিনা তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ভিন্ন কিছু এঙ্গেল থেকে এটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ছবিটি গতকাল থেকে অনলাইনে ছড়িয়েছে। নানানভাবে সার্চ করেও গতকালের আগে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরে কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটি পেশাদার কোন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার ছবি। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এটি ফেনী নোয়াখালী অঞ্চলের চলমান বন্যার ছবি, তাহলে এটি অনেক মূল্যবান একটি ছবি হওয়ার কথা। কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার এই ছবি তুললে অবশ্যই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এটি তিনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন সেটিতে প্রকাশ করবেন। তিনি ফ্রিলান্সার হলে অনেক দামে ছবিটি কোন সংবাদমাধ্যমের কাছে বিক্রি করবেন। অর্থাত, ছবিটি যেভাবে শুধু ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে তেমনটি হওয়া কথা না। প্রথমে এটি কোন সংবাদমাধ্যম বা এরকম প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট ও ক্যাপশন সহ প্রকাশিত হয়ে পরে ফেসবুকে আসার কথা। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা হয়নি।

যদি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার এটি তার সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে থাকতেন তাহলে এমন একটি আবেদনময়ী ছবিতে অবশ্যই তার নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম ওয়াটারমার্ক করে দেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, ছবিটির কোনো ভার্সনে এমন কিছু দেখা যায় না। শিশুটি ক্যামেরার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে ফটোগ্রাফার খুবই কাছে ছিলেন এবং তিনি এই অবস্থায় একাধিক ছবি/ভিডিও তোলার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে এই একটি সূত্রহীন ছবি ছাড়া এই ঘটনার আর কোনো এঙ্গেলের ছবি বা ভিডিও নেই। ছবিতে যেভাবে একটি উন্মুক্ত পানিভর্তি এলাকায় ২/৩ বছরের বাচ্চাকে অভিভাবক ছাড়া দেখা যাচ্ছে সেটি অসম্ভব না হলেও খুব স্বাভাবিক নয়। বাচ্চাটির ঠোঁটের গঠনও কিছুটা অস্বাভাবিক। একই সাথে তার চেহারায় আতঙ্কের কারণে চোখ ও কপালের একপাশে যে ভাঁজ (প্রকৃত ভাঁজ পড়বে কপালের ঠিক মাঝখান বরাবর) পড়েছে সেটিও স্বাভাবিক এক্সপ্রেশন মনে হচ্ছে না। সবমিলিয়ে বলা যায়, ছবিটি সত্য ঘটনার না হয়ে তৈরি করা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এ দিকে রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি। রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজ থেকে শিশুর ভাইরাল হওয়া ছবিটিসহ দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, বন্যার বাস্তব দৃশ্য প্রকৃতপক্ষে আরো করুণ। তবে, আমাদের বিশ্লেষণে ভাইরাল ছবিটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি।

পোস্টে আরো বলা হয়, আলোর প্রতিফলন, শিশুটির চোখের অভিব্যক্তি, কপালের ভাঁজ ও ঠোঁটের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি অসংগতি অনুযায়ী আপাতদৃষ্টিতে অনেকেই ভাইরাল ছবিটিকে এআই জেনারেটেড বলেই ধারণা করেছেন। তা ছাড়া, এআই ছবি যাচাইয়ের বিভিন্ন ওয়েবসাইটও ছবিটিকে ৬০% থেকে ৯১% পর্যন্ত এআই বলে ফলাফল দিয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম হতে গরফঔড়ঁৎহবু অও ব্যবহার করে এই একই ধরনের ছবি পুনরায় তৈরি করার চেষ্টায়ও প্রায় একই ফলাফল পেয়েছি আমরা।

ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হলেও বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নেটিজেনদের অনেককেই ছবিটি পোস্ট করে বিভিন্ন আবেগঘন লেখা জুড়ে দিতে দেখা যায়।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version