-->
শিরোনাম

অভিযানে আসামি না মিললেও মিলছে দেশি-বিদেশি মুদ্রা

গোলাম মুজতবা ধ্রুব
অভিযানে আসামি না মিললেও
মিলছে দেশি-বিদেশি মুদ্রা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘যাদের’ খোঁজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছেন অভিযানে তাদের সন্ধান না মিললেও মিলছে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অর্থ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যাদের খোঁজে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছেÑ অভিযানের আগেই তারা সেই খবর পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন কি না। অভিযান পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তারা আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামালের মোহাম্মদপুর থানাধীন বাবর রোডের এফ ব্লকের দুটি ভবনের দুটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে তার সন্ধান না পেলেও বাসা দুটি থেকে তিন কোটি টাকাসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। বাসা দুটি থেকে উদ্ধার করা অর্থের মধ্যে টাকার পরিমাণ তিন কোটি এক লাখ টাকা। বিদেশি মুদ্রা ১০ লাখ টাকা সমমূল্যের। বিদেশি মুদ্রার মধ্যে তিন হাজার মার্কিন ডলার, এক হাজার ৩২০ মালেশিয়ান রিঙ্গিত, দুই হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, চার হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরি ডলার, এক হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার দক্ষিণ কোরিয়ান ইয়ান ও ১৯৯ চাইনিজ ইয়ান রয়েছে।

ডিএমপির সংবাদমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওবায়দুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানো ওই অভিযানের সময় সাবেক সচিব শাহ কামাল বাসায় ছিলেন না। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তারও নেই।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের (বিপু) মালিকানাধীন ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ ভবনে রাতভর অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নসরুল হামিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে এক কোটি ৫১ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে। এই অর্থের মধ্যে ৫১০ লিরাসহ (তুরস্কের মুদ্রা) কিছু বিদেশি মুদ্রা রয়েছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মধ্যরাতে প্রিয় প্রাঙ্গণে ওই অভিযান শুরু হয়ে অভিযান শেষ হয় গত বুধবার ভোরে। ওই সময় ভবনটি ঘিরে রাখেন সেনাবাহিনী, বনানী থানার পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। অভিযানের সময় নসরুল হামিদ অফিসে ছিলেন না। অভিযানে প্রিয় প্রাঙ্গণ ভবনের দ্বিতীয় তলায় হামিদ গ্রুপের কার্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টসের কক্ষে বড় ভল্টের পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে তিন লাখ ৮ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়। এর বাঁয়ে থাকা আরেকটি কক্ষের দুটি ড্রয়ার থেকে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করা হয়। এরপর ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত হামিদ গ্রুপের কার্যালয় থেকে ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া ওই অফিস থেকে ৫০ পাউন্ডের চারটি নোটÑ যার একটি ছেঁড়া, তুরস্কের মুদ্রা ২০০ লিরার একটি নোট, ১০০ লিরার দুটি, ৫০ লিরার একটি, ২০ লিরার একটি ও ১০ লিরার চারটি নোট পাওয়া গেছে। সর্বমোট ৫১০ লিরা জব্দ করা হয়। ভবনটি থেকে দেশি বিদেশি মোট এক কোটি ৫১ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নসরুল হামিদের ‘হামিদ রিয়েল স্টেট’ নামের আবাসন কোম্পানি রয়েছে।

পুলিশের অভিযানের প্রশংসা করলেও সেখানে আসামিদের খোঁজ না মেলায় আক্ষেপ করে পুলিশকে আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সাধারণ নাগরিকেরা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, পুলিশ বিভিন্ন মামলার হাই প্রোফাইল আসামিদের ধরতে যেসব অভিযান চালাচ্ছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে অভিযানে আসামি ধরা না পড়ায় কিছু প্রশ্নও থেকে যায়। পুলিশ আরো একটু সতর্ক হয়ে অভিযান পরিচালনা করলে দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের পাশপাশি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা যাবে বলে মনে করছি।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করা ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হচ্ছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা দরকার। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে আসলেই তারা অপরাধে জড়িত কিনা। তাই হাই প্রফাইল আসামিদের গ্রেপ্তার করে প্রমাণ করতে হবে কেউই এখন আইনের ঊর্ধ্বে নন।

মুগদা এলাকার বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিরা পালিয়েছে। তারা এতটাই দুর্ভাগ্যবান যে তাদের টাকা নিয়ে যেতে পারে নাই। তারা মনে করেছেÑ আগে জান বাঁচা। তাই পালানোর আগেই অভিযান পরিচালনা করা দরকার ছিল।’

রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের না পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু টাকা পাওয়ার বিষয়টিকে খারাপ ভাবা যাবে না। দেখতে হবে টাকাটা বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে অর্জন করা কিনা। আমার ঘরে বৈধ টাকা তো থাকতেই পারে বলেও জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, অভিযানের তথ্য কারো কাছে চলে যাওয়ার কথা নয়। অভিযানের যে গোপনীয়তা সেটা আমরা রক্ষা করি সব সময়। আর যারা বিভিন্ন মামলার আসামি তারা পালিয়ে থাকতে পারবে না, ধরা পড়তেই হবে। আসামিদের ধরা পড়তেই হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version