ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সলিল চৌধুরীর ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা/আজ জেগেছে এই জনতা, এই জনতা।’ গানটি এ দেশে খুবই জনপ্রিয়। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে মনের অজান্তেই এই গানের কলি মানুষের কণ্ঠে ভাসে। সেই গানের কল্পনার চিত্র বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে গতকাল শনিবার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিকালে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালতে তাকে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে পুলিশ তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে তোলার সময় তার দিকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন অনেকে। এসময় কয়েকজন হামলার চেষ্টাও চালান। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত থেকে বিচারপতি মানিককে আটকের কথা জানায় বিজিবি। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আটকের পর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কলাপাতায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তার সামনে অবস্থান করা লোকদেরকে বিচারপতি মানিক বলছেন, আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে। জবাবে তাদের মধ্যে একজনকে (যাকে ভিডিওতে দেখা যায়নি) বলতে শোনা যায়, আমাদের পয়সার প্রয়োজন নাই। এরপর মানিককে বলতে শোনা যায়, ওই ফালতু লোক দুটাকে আনিও না। আমি এ দেশে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য।
এই ভিডিওটি যে আসলেই ভারতের ভেতরকার তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিজিবির হাতে বিচারপতি মানিক আটক হওয়ার পরের আরেকটি ভিডিওতে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি সদস্যদের কাছে মানিক স্বীকার করেছেন, তিনি ১৫ হাজার টাকার কন্টাক্টে ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজন লোক ভারতের ভেতরে নিয়ে তাকে মারধর করে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা ও নোয়াখালীতে দুটি মামলা হয়েছে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে। দুই মামলাতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাবেক এই বিচারপতির আটক হওয়ার সময়ের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাকে বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদের সময়ের একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমেও এসেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরিহিত শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুয়ে আছেন জঙ্গল এলাকায় কলাপাতার ওপর। তার কোলের কাছে একটি টুপি। মুখে কয়েক দিনের না কাটা দাড়ি। পাশে রয়েছে ছোট কয়েকটি পোটলা। এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টকশোতে কথা বলতেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে কয়েকদিন আগে। তাকে আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ বলে অভিহিত করে থাকেন অনেকে। এর আগে লন্ডনে তার ওপর হামলা করা হয়।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য