-->
শিরোনাম

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর মিশনে সরকার

সিরাজুল ইসলাম
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর মিশনে সরকার
  • শেখ হাসিনার আমলে লুটপাটের হিসাব করছে ইউনূসের কার্যালয়
  • ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার
  • টাকা পাচার হয় ১০টি দেশে
  • অর্থ পাচার হয় দুই উপায়ে
  • অনেক রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী জড়িত
  • মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম
  • কানাডায় বেগমপাড়া

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে। সরকারপ্রধান বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগী শেখ হাসিনার শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আত্মসাৎ করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এদিকে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কত টাকা পাচার হয়েছে; তার কোন সঠিক হিসাব নেই।

তবে কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। টাকা পাচার হয় প্রধানত ১০টি দেশে। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড। এস অর্থপাচারে এ দেশের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলারা জড়িত। মালয়েশিয়ায় পাচার করা অর্থে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন অনেক বাংলাদেশি। এছাড়া কানাডায় বাংলাদেশিদের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে বেগম পাড়া। সাধারণত আমদানি-রপ্তানির সময় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানোর মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়ে থাকে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন। এর সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ লাখ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (জিআইবি), ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া অর্থের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থের প্রকৃত পরিমাণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রম শুরু করা হবে।

অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তিদের বিচারের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহায়তা নিয়ে আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার।

শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করবে কমিশন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের জন্য ছয় মাসের মধ্যে একটি বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের লক্ষ্য হলো সব আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে সক্ষম একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা। তবে এ উদ্দেশ্য সফল করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা ও অর্থের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার অর্থ আত্মসাৎকারীদের দেশি-বিদেশি সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশ থেকে ফেরত এনে ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর এই পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাতের কাঠামোগত সংস্কার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সরকার বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আরাভকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন : দুবাইয়ের আরাভ-কাণ্ডের পর সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, স্বর্ণ ব্যবসা করতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়, তা তিনি পেলেন কীভাবে। এত অল্প সময়ে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন, নাকি সবই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া। আরাভ খান খুনের মামলা মাথায় নিয়ে ভারত হয়ে তারপর দুবাই গেছেন। একইভাবে আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারির অন্যতম নায়ক প্রশান্ত কুমার হালদার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে অবশ্য তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। সন্দেহ নেই, ভারতে যে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, তা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়েই কেনা।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, এই বক্তব্যের আসলেই সত্যতা আছে। এবার দুবাই প্রসঙ্গ। ‘মাফিয়াপ্রধান’ বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ডন’ দুবাই বসে অন্য দেশের অপরাধী দল চালাচ্ছেন, নাশকতার পরিকল্পনা করছেন, সিনেমায় সচরাচর এটা দেখা যায়। এরও সত্যতা আছে। আর কয়েক বছর ধরেই বলা হচ্ছে, অপরাধীদের নতুন আশ্রয়স্থল এবং অবৈধ অর্থ লেনদেনের জায়গা হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে দুবাই। এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও হয়েছে।

টাকা পাচার কেন হয় : বাংলাদেশিদের কাছে দুবাই কতটা জনপ্রিয়। অথবা বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার মূল গন্তব্যস্থল কোথায়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় সরকারকে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী একটি কৌশলপত্র তৈরি করতে হয়। এখন পর্যন্ত এ রকম দুই কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্স অব টেররিজম নামের প্রথম কৌশলপত্রটি ছিল ২০১৫-১৯ সময়ের জন্য। আর পরেরটি ২০১৯-২১ সময়ের। সর্বশেষ কৌশলপত্রেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার, এ রকম ১০টি দেশ বা অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছে। নতুন কৌশলপত্র এখনো তৈরি করা হয়নি।

কৌশলপত্রে যা আছে : কৌশলপত্রে স্বীকার করা হয়েছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। ফলে এসব দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে অর্থের অবৈধ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। যেমন- যদি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতির অর্থ সফলভাবে পাচার বা লুকিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে সে অর্থ যথাযথ জবাবদিহি ছাড়াই ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হয়। আর এভাবে ক্ষমতায় থেকে গেলে দুর্নীতি বা টাকা পাচার শনাক্ত করে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই তারা দুর্নীতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হন। এ কারণেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬.৪ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অবৈধ আর্থিক ও অস্ত্রের প্রবাহ হ্রাস, চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরতের জোরদার চেষ্টা এবং সব ধরনের সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই।

কৌশলপত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবৈধ অর্থের প্রবাহের বড় উৎস হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের ‘গ্র্যান্ড’ বা মহা দুর্নীতি, বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ, যেমন চোরাচালান, মাদক ও মানবপাচার, ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ও দ্রুত অবলোপন, জাল-জালিয়াতি, অবৈধভাবে কর্মরতদের বিদেশিদের অর্থ অবৈধভাবে লেনদেন এবং বৈধ আয় হলেও কর ফাঁকি দিয়ে ও প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন লঙ্ঘন করে তা পাচার। আর অর্থ পাচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন ও বিনিয়োগ নীতি লঙ্ঘন, অন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশের উঁচু মানের জীবনযাত্রার লোভে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ। মূলত বিনিয়োগ ভিসা, স্থায়ীভাবে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসবাসের অনুমোদন, বিভিন্ন সেকেন্ড হোম প্রকল্প ও নমনীয় বিনিময় হারের ব্যবস্থা বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থ পাচারে উৎসাহিত করছে।

কৌশলপত্রে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন গবেষণা ও অবৈধ অর্থ প্রবাহের ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ১০টি দেশ বা অঞ্চলেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়। এই ১০ দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস।

মানি লন্ডারিং কী : অর্থ পাচার বা অর্থের সব ধরনের অবৈধ ও অপব্যবহার বন্ধে যদিও একটি আইন আছে। তবে তা এখনো কার্যকর কিছু করে দেখাতে পারেনি। আর এই আইনের নাম হচ্ছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন। মূলত মুদ্রার সব ধরনের অপব্যবহারের নামই আসলে মানি লন্ডারিং। মানি লন্ডারিং এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কিংবা সম্পদকে বৈধ করে নেওয়া হয়।

ইতিহাস বলছে, বিশ্বে অর্থের অপব্যবহার বন্ধের প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৭০ সালে। সংঘটিত অপরাধ চক্র থেকে মুক্তি পেতেই সেই উদ্যোগ। ব্যাংকে অপরাধ চক্রের আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে তৈরি করা হয় ব্যাংক সিক্রেসি অ্যাক্ট। এটি পাস হয় ১৯৭০ সালের ২৬ অক্টোবর। আইনে বলা ছিল, ১০ হাজার ডলারের বেশি লেনদেন হলেই তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে হবে।

বাংলাদেশ কী করেছে : বাংলাদেশে অর্থের অবৈধ ব্যবহার নিয়ে প্রথম আইনটির নাম ছিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০২ (২০০২ সালের ৭ নম্বর আইন)। এ আইনের বিধানাবলি অপর্যাপ্ত থাকায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করে (অধ্যাদেশ নম্বর ১২, ২০০৮) কিছু বিষয় যুক্ত করে। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অধ্যাদেশটি সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী পরীক্ষা করে ২০০৯ সালে আইনে রূপান্তরিত করে। আইনটির শিরোনাম ছিল মানি লন্ডারিং আইন-২০০৯ (২০০৯ সালের ৮ নম্বর আইন)। ২০০৯ সালের আইনটিও পরে বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২ জারি করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ নামেই পরিচিত।

অর্থ পাচারের কিছু পরিসংখ্যান : ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগরিটি (জিএফআই) বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। আর সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, পাচার করা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হবে।

কেন অর্থ পাচার কমে না : বাংলাদেশ কেন অর্থ পাচার ঠেকাতে পারছে না। ২০১৩ জুলাই মাসে বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হয়েছিল। এগমন্ট গ্রুপ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম; যারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন-সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে। এগমন্ট গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের একই ধরনের সংস্থার কাছ থেকে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও বিদেশে পাচার করা অর্থের তথ্য পেতে পারে। কিন্তু তাতেও খুব লাভ হয়নি। কেননা, বাংলাদেশ পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের বৈশ্বিক কাঠামো কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডে (সিআরএস) ঢোকেনি। এই কাঠামোতে ঢুকতে হলে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা জরুরি। এ জন্য আর্থিক খাতকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন ও মান অনুসরণ করতে হয়। বাংলাদেশের সংকট এখানেই। ফলে বক্তৃতা আর বিবৃতির মধ্যেই বাংলাদেশের সব উদ্যোগ সীমিত। টাকা পাচার বন্ধে আসলে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।

পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ : বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। এই তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। গত ৩ জুন রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মিলনায়তনে বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান ও সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত। সমিতির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কালোটাকা ও পাচার হওয়া অর্থ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতি সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মোট পুঞ্জিভূত কালোটাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ কোটি টাকা। আর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে আগামী অর্থবছরে যদি কালোটাকার মাত্র দশমিক ৯৮ শতাংশ ও পাচার হওয়া অর্থের দশমিক ৪৯ শতাংশ উদ্ধার করা যায়, তাহলে সরকারের আয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতি সমিতির নেতারা বলেন, অন্য কোনো ধরনের বাজেট দিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাক্সিক্ষত উত্তরণ-রূপান্তর সম্ভব নয়। বিকল্প বাজেট বাস্তবায়ন করলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে একদিকে বিপজ্জনক বৈষম্যপূর্ণ অবস্থা থেকে স্বল্প বৈষম্যপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব। পাশাপাশি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে দরিদ্র, বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থান থেকে একটি শক্তিশালী টেকসই মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উত্তরণ ঘটাবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version