-->
শিরোনাম

বন্যায় মৃত বেড়ে ৫২, পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
বন্যায় মৃত বেড়ে ৫২, পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে

সাম্প্রতিক বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনো পানিবন্দি প্রায় ১১ লাখ পরিবার। বন্যাকবলিত এলাকায় ৫৯৫টি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এদিকে দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ফেনীর বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। সেই সঙ্গে সুপেয় পানির অভাব ও নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির স্পর্শ বাড়াচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত ১৪ বছর বয়সী রাশেদের দুই হাতের আঙুলগুলো র‌্যাশে ঢেকে গেছে। তার দাদি হোসনে আরা বেগম নাতিকে নিয়ে এসেছিলেন ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবিরে।

হোসনে আরার ভাষ্য, তার নাতি এর আগে কখনো এই ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়নি। এই বৃদ্ধার ধারণা, বন্যার নোংরা পানির সংস্পর্শে এসেই রাশেদের এ ধরনের রোগ হয়েছে। ওই অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই ধারণার সত্যতা পাওয়া গেল। তিনি জানালেন, রাশেদ স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত। মূলত দূষিত পানি ব্যবহার করলে এই রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা চুলকানিতে ভোগেন। এবং রোগটি ছোঁয়াচে।

১২ বছর বয়সী সায়মাকেও একই রোগে ভুগতে দেখা গেল। তার পায়ের আঙুলগুলো র‌্যাশে ভরে গেছে। গত বুধবার দুপুর পর্যন্তও সায়মাদের বাড়ির চারপাশ পানিতে থৈ থৈ করছিল। ফলে কোনো মেডিকেল টিম তখন পর্যন্ত ওই বাড়িতে পৌঁছাতে পারেনি। এদিন দুপুর ৩টার দিকে সায়মার বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা তাদের ঘরের সামনে ভিজে যাওয়া জিনিসপত্র পরিষ্কার করছিলেন। তিনি বলেন, বাড়ির জিনিসপত্র বাঁচাতে বাড়ির সবার সঙ্গে সায়মাকেও নোংরা পানির মধ্যে নেমে কাজ করতে হয়েছে। এই চুলকানি তারই ফল।

এদিকে ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব রানা জানালেন, পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ডায়রিয়ার রোগী। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়ন, পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও একই চিত্র দেখা যায়।

সিভিল সার্জন বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে ১ হাজার ৮০৭ জন রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের বেশিরভাগই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। তিনি এও জানালেন, বন্যায় বিরূপ অবস্থার কারণে তারা এখনো রোগের ভিত্তিতে আক্রান্তদের তালিকা তৈরি করতে পারেননি। এই চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ, মূলত সুপেয় পানির অভাবই ডায়রিয়ার কারণ।

এদিকে এখনো পানিবন্দী গোপাল ও রাধানগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যার ভেতর তারা কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা পাননি।

জেলা সিভিল সার্জনও বলছেন, এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় তারা মেডিকেল টিম পাঠাতে পারেননি। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ফেনীতে ছয়টি হাসপাতাল এবং ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বন্যাকবলিত মানুষের চিকিৎসা চলছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজার জেলায় আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, ফেনীতে ১৭ জন, নোয়াখালীতে ৮ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু রয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলায় এখনো একজন নিখোঁজ আছেন।

এছাড়া ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলার ৬৮টি উপজেলায় ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১১টি জেলার ৪৯২টি পৌরসভা বা ইউনিয়নে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। এরই মধ্যে ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জন মানুষ এবং ৩৬ হাজার ৪৪৮টি গৃহপালিত পশু রাখা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় মোট ৫৯৫টি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ, ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার পিস শুকনো খাবার বা অন্যান্য খাবার এবং শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version