দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব বেসামরিক ব্যক্তিদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে- এরই মধ্যে সেগুলো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। আসছে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্রগুলো যথাযথ আইন মেনে জমা না দিলে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে, এমনকি সেগুলো উদ্ধারে প্রয়োজনে অভিযান চালানোর কথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে দলীয় বিবেচনায় অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর আত্মগোপনে থাকা এসব নেতাকর্মীরা এখন কিভাবে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সাল থেকে এ বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার বেসামরিক ব্যক্তিদের যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে সেগুলো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানায়। পাশপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছে পুলিশ। এমন অবস্থায় এরই মধ্যে কেউ কেউ থানায় উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিলেও কেউ কেউ রয়েছেন দ্বিধা ও শঙ্কায়।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আগ্নগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাই অস্ত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। একদিকে বাসা ও ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বিরোধী মতের লোকজনের হামলার ভয়, অন্যদিকে ভবিষ্যতে অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার আতঙ্ক তাদের ঘিরে ধরেছে। মগবাজারের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্রনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, সারা দেশে এখন যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসায় হামলা হচ্ছে- সেটা নিয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই সময়ে অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা বলাতে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। তাই আমরা আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ, আমরা মনে করছি, অস্ত্র মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের জড়াতেই এমন সব কাজ করা হচ্ছে।
মতিঝিলের এক আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারকে সবার আগে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা পুলিশের থানা, ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র লুট করেছে, সেগুলো আগে উদ্ধার করতে হবে। যারা বৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখেছে- তারা বৈধ উপায়েই সময় হলে সেগুলো জমা দেবে। এখনো আপাতত তারিখ ঠিক করে দেওয়ার কোনো দরকার নেই।
ঢাকায় অদূরে বসবাস করা সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, আমরা অনেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বৈধ উপায়েই বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছি। সেগুলো যথাযথ উপায়ে আমরা জমাও দেব। তবে তার আগে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আওয়ামী লীগ নেতার বাসা কিংবা কার্যালয়ে হামলা করে লুটপাট চালানো যাবে না।
এরই মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জানিয়েছেন। তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, আমার থানায় এখন পর্যন্ত ৩টা অস্ত্র জমা পড়েছে। যারা জমা দিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের কেউ না। কেউ নিজে যদি থানায় আসতে কোনো ধরনের সমস্যা মনে করেন তাহলে তার কোনো প্রতিনিধিকে পাঠালেও আমরা অস্ত্র জমা রাখবো। কোনো সমস্যা হবে না।
পল্টন থানার ওসি মোল্লা মো. খালিদ হোসেন বলেন, আমরা ১০টি অস্ত্র এরই মধ্যে পেয়েছি। আর একজন একটি উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হয়ে অস্ত্র জমা দিতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, উপযুক্ত প্রতিনিধি হলে তার পক্ষ থেকে অস্ত্র জমা নিতে কোনো সমস্যা নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর ভোরের আকাশকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের অস্ত্রগুলো গ্রহণ করার জন্য। দেশের সব থানায় এখন এসব অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। যারা নিজেরা এসে অস্ত্র জমা দিতে পারবেন না তাদের মনোনিত প্রতিনিধিরা অস্ত্রগুলো জমা দিতে পারবেন। তবে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেউ অস্ত্র জমা না দিলে সেগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। তখন পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য