-->
শিরোনাম

কী বার্তা দেবেন ড. ইউনূস

সিরাজুল ইসলাম
কী বার্তা দেবেন ড. ইউনূস
  • রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক আজ
  • নেই আওয়ামী লীগ
  • গুরুত্ব পাবে সংস্কার
  • প্রস্তাব গ্রহণ করবে সরকার
  • নির্ধারণ হতে পারে মেয়াদ

অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজে সমর্থন থাকলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় ‘হতাশ’ বিএনপি। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পরই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে দলটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বৈঠকে তিনি কী বার্তা দিবেন; সেই অপেক্ষায় আছেন দেশবাসী। এ বৈঠকে নেতারা যে প্রস্তাব দেবেন; সরকার তা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৈঠকে সরকারের মেয়াদও নির্ধারণ করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়া কয়েকজন নেতা রাষ্ট্রের কিছু বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিতে পারেন। এ বৈঠকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন দলটির উপকমিটির একজন নেতা।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর কাম বাসভবন যমুনায় বিকাল ৩টায় এই মতবিনিময় শুরু হবে বলে উপদেষ্টা দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রাত ৮টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা মতবিনিময়ের কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দৈনন্দিন সূচিতে। গতকাল শুক্রবার উপদেষ্টা দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলকেই মতবিনিময়ে চাইছি। মতবিনিময়ে আগ্রহীরা সবাই আসবে। দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বুঝতে পারবেন। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দেশ ‘সংস্কার’ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখব। তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে সেগুলো গ্রহণ করব। সে ব্যাপারে একটা পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা তো অবশ্যই এই মতবিনিময়ে অংশ নেব। আমরা আমাদের কথাগুলো বলবো। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের আলোচনা শুরু করতে হবে। এই সরকার কোন কোন কাজ করতে পারবে, সেই কাজ করার জন্য কতদিন সময় প্রয়োজন হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের আমলে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এগুলো ছিল ভোট জালিয়াতির নির্বাচন। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। এ কারণে যতটা দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই সরকার যেহুতু সবেমাত্র ক্ষমতা নিয়েছে; সেহেতু নির্বাচন দিতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে। কারণ নির্বাচন একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। আমরা সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রত্যেক সরকারই কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এই সরকারেরও কিছু লক্ষ্য আছে। তারা কিছু বিষয়ে সংস্কার করতে চাচ্ছে; করুক। তাদের কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।

আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ বলেন, আমাদের ডাকা হয়নি। ডাক পেলে আমরাও যেতাম। আওয়ামী লীগকে ছাড়াই পাতানো একটি নির্বাচনের আয়োজন চলছে। বাংলাদেশের জনগণ এটা মেনে নেবে না।

এই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে জানা গেছে। দলটির একজন নেতা বলেছেন, এই সরকার কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তারা এখনই নির্বাচন চান না। এমনকি রোডম্যাপও চান না। তারা সরকারকে সময় দিতে চান। এর আগে মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হাত পা হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আহতরা। বন্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। এ সময় রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন নিয়ে বারবার কথা বলছেন।

তিনি বলেন, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে। আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে তাদের উচিত এ বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এ সময়টা ওখানে না দাঁড়িয়ে নির্বাচন জিকির করলে জাতি এটাকে কবুল করবে? তাদের তো নির্বাচন লাগেও না। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যা দখলে নিয়েছিল সেই ফুটপাত থেকে শুরু করে তারা (বিএনপি) সবকিছু দখলে নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৪৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর বাইরে আলোচিত জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দলই ও মোর্চা নিবন্ধনের বাইরে থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারকে স্বাগত জানানো হয়। গত ২৪ আগস্ট থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রশ্নে ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি জানাচ্ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, সে প্রসঙ্গে সেদিন তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু মানুষের সংস্কারে’ তিনি বিশ্বাস করেন না। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস তার সরকারের যে কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেখানে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। তাতে ‘হতাশা’ প্রকাশ করে ফখরুল বলেছিলেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল মুহাম্মাদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। দেশকে আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেরাতে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার যমুনায় আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ডাক পান বিএনপি নেতারা।

সেখানে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, তাদের মধ্যে অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নিল ইউনূস সরকার।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version