-->
শিরোনাম

শর্ত দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার

বিশেষ প্রতিবেদক
শর্ত দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার
  • ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এ সেবা বন্ধ, দিনভর অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রোগী-স্বজনেরা
  • চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চার দফা দাবি পূরণ না হলে আবারও কর্মবিরতির হুমকি চিকিৎসকদের
  • হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস উপদেষ্টার

দিনভর অবর্ননীয় দুর্ভোগের পর চব্বিশ ঘন্টা সময়সীমা বেধে দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। রোববার বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তারা। এর আগে দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেফতার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ থাকে জরুরি বিভাগ,বহির্বিভাগসহ সব ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা সেবা। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী ফিরে যান। হাসপাতালের ভর্তি থাকা রোগীরাও চিকিৎসা পাননি। সারাদেশে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও স্বজনের অবর্ননীয় দুর্ভোগে পড়েন।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। বৈঠক থেকে বেরিয়ে রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হবে। আর ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান বলেন, তাঁরা জরুরি সেবাসহ কিছু সেবা এখনই চালু করবেন।

কিন্তু আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আবদুল আহাদ বলেন, এখন দাবি পূরণ হলে এখনই তাঁরা কাজে ফিরবেন। অবশ্য চিকিৎসকদের আরেকটি পক্ষ সাংবাদিকদের বলেন, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই আগামীকাল সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

তবে পাল্টাপাল্টি এসব ঘোষণার আধা ঘণ্টা পরেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেননি।

গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। একই দিন মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল রোববার সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। পরে সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কিন্তু সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর চিকিৎসকেরা সারা দেশে কর্মবিরতির ডাক দেন। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সামনে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢামেক হাসাতালের আবাসিক সার্জন আবদুল আহাদ চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তখন আবদুল আহাদ বলেন, সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবে।

এই ঘোষণার পর ঢাকা মেডিকেলে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তিনি আন্দোলকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনা ও দুই প্লাটুন বিজিবি ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের চার দফা দাবি

১. হাসপাতালের মতো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা। দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা।

২. নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আমর্ড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৩. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ছাড়া বহিরাগত কাউকে কোনোভাবেই ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বিষয়টি স্বাস্থ্য পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা।

৪. হাসপাতালে রোগীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা-অসংগতি পরিলক্ষিত হলে, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আকারে জানানো। এভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।

বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়। ওই সভায় এই চার দফা দাবি তুলে ধরেন চিকিৎসকরা। তাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চিকিৎসকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুর রহমান গত রোববার বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, আজ সকাল (রোববার) থেকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন। গতকাল শনিবার একদল বহিরাগত এসে সমস্যা সৃষ্টি করে। তারা অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে চিকিৎসকদের বের করে নিয়ে মারধর করে।

হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস উপদেষ্টার

চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ আশ্বাস পেয়ে আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা।

রোববার পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তিনি পরিচালকের কক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও তাতে যোগ দেন।

বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, "যে কোনো জায়গায় কিছু হলেই চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়। এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আপনাদের কথা শুনতে এসেছি। আমিও সমব্যথী। আমি আপনাদের মায়ের মত, মায়ের কাছে কিছু লুকাতে নেই। আপনারা বলেন, আমি স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করতে চাই।’

চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

ঢামেক হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। রোববার ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন (৫৩) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version