-->
শিরোনাম

যেকোনো সময় আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিবেদক
যেকোনো সময় আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ

এবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (সিইসি) পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। পদত্যাগের ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো সময়। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঘটার সম্ভাবনা বেশি। পদত্যাগ করতে কমিশনের প্রত্যেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। সিইসি সংস্কার করার বিষয়টি ইতোমধ্যে দেশবাসীকে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর যেসব প্রতিষ্ঠান সংকটে রয়েছে তার মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অন্যতম। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির চালকের আসনে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার কমিশনার পদত্যাগের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। তবে, তারা সরকারের বার্তার অপেক্ষায় রয়েছেন। নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য, সরকারের সাড়া না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে সরকার বা জনগণকে তাদের নিজেদের অবস্থান জানানোর চেষ্টা করেছেন।সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো নির্বাচন কমিশনেও সংস্কার আসছে এটি নিশ্চিত বলে মনে করছে বর্তমান কমিশন। সে জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস করলেও বর্তমানে তাদের বিদায়ের প্রস্তুতিই প্রাধান্য পাচ্ছে। শেষ সময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নিচ্ছেন তারা। বিশেষ করে গত সোমবার কমিশন বৈঠক করার পর কমিশনে তাদের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেকোনো সময় পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত। তবে সময় কখন সেটা বলতে পারছি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পরদিন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, মো. আলমগীর, বেগম রাশিদা সুলতানা দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন। এ দিন কমিশনার আনিসুর রহমান কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। এরপর থেকে সিইসিসহ অন্যরা অনিয়মিতভাবে যে যার সুবিধামতো সময় অফিস করে চলেছেন। তবে, মাঝে ১২ আগস্ট তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। জানা গেছে, ওই বৈঠকে তারা পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করারও সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব-পরিচয়ের সূত্র ধরে সিইসি নিজেই ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে, বিভিন্ন মারফতে চেষ্টা হলেও সাক্ষাতের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের কোনো সাড়া মেলেনি বলে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, সরকার পতনের পরদিনই নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চেয়ে নির্বাচন ভবনের প্রধান ফটকে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, কমিশনারদের মধ্যে বর্তমানে আহসান হাবীব মোটামুটি নিয়মিত অফিস করছেন। অন্যরা মাঝে মধ্যে দপ্তরে আসেন। কমিশনার আনিসুর রহমান খুবই কম আসেন।

এদিকে, সাক্ষাতের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সাড়া না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি জাতীয় দৈনিকে মতামত কলাম লিখেছেন। ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংকটে। আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কমিশনের প্রধান হিসেবে পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছি।

নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও সফল বিপ্লবোত্তর সাংবিধানিক পরিস্থিতিতে সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন হয়তো অচিরেই বিগত হবে। কিন্তু এতে সংকটের নিরসন হবে না। সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ভেঙে দিতে হয়েছে। সংবিধান যদি বহাল থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে তৎপরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। যদি না করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে ৭খ অনুচ্ছেদের বিধানমতে কমিশনাররা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করে থাকবেন।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহম্মদ ইউনূস গত ২৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করবো। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখবো।

ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনি ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্যপ্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

নির্বাচন কমিশনারদের ঘনিষ্ঠ ইসির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিশনারদের সকলেই পদত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা দপ্তরে থাকা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও ডকুমেন্ট ইতোমধ্যে বাসায় নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমি আমার বা কমিশনের অবস্থান নিয়ে একটি লেখা লিখেছি। সেখানে আমি অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আপাদের যেটা বুঝার সেখান থেকে বুঝে নিন।

আপনাদের পদত্যাগের কোনো প্রস্তুতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের পদত্যাগের কোনো প্রস্তুতি নেই। যখন প্রয়োজন হবে তখন জানতে পারবেন।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি কারও আস্থা নেই। কাজেই বর্তমান সরকারের সংস্কারের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানটি অগ্রাধিকারে থাকবে বলে আমি মনে করি। সরকার এখনও কোনো সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আগে কোনটা পরে কোনটা সংস্কার হবে এটা বলার সময় এখনও আসেনি। সরকার সংস্কারের কাজে হাত দিলে এটা বলা যাবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version