-->
শিরোনাম

বন্যাদুর্গত এলাকার কর্মচারিরা গৃহঋণের কিস্তি স্থগিত চান

আশীষ কুমার দে
বন্যাদুর্গত এলাকার কর্মচারিরা
গৃহঋণের কিস্তি স্থগিত চান

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মরত বন্যাদুর্গত এলাকার কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা গৃহঋণের কিস্তির টাকা আগামী ৬ মাসের জন্য কর্তন না করার দাবি জানিয়েছেন। বিলম্বে কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বাড়তি সুদ না আদায়েরও অনুরোধ করেছেন তারা। গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়েছেন- এমন অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি এই অভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারিদের গৃহঋণের জন্য সংস্থার নিজস্ব তহবিল রয়েছে। সেই তহবিল থেকে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে ঋণ নিয়ে থাকেন। এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, সাধারণ কর্মচারিরা ৬ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা এবং চাকরির ধরন ও বেতন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে থাকেন তারা। সূত্র মতে, কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা চাকরির বয়স ভেদে ৬ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ নিতে পারেন। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন থেকে সুদসহ এই ঋণের টাকা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। যেমন ২০ লাখ টাকা ঋণের ক্ষেত্রে মাসিক বেতন থেকে সুদসহ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা কর্তন করা হয়। তবে চাকরির বয়সসীমা বিবেচনায় এই কিস্তির টাকার পরিমাণ কম-বেশি নির্ধারণ করে থাকে কর্তৃপক্ষ। তবে এবার বন্যার কারণে বেতন থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

গত মাসে (আগস্ট) দেশের ১২টি জেলা শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। জেলাগুলো হলো- কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এসব জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ৭ লাখ ৭২ হাজার ৩২১ হেক্টর; যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার ৪০২ হেক্টর। এছাড়া বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামোসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বহু মানুষের বসতঘর। সব মিলিয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয় ওই সব এলাকায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিআইডব্লিউটিএতে কর্মরত। বিভিন্ন পর্যায়ের এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার; যার প্রায় অর্ধেকই গৃহঋণগ্রহীতা। তাদের প্রায় শতভাগই সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অনেকের বসতঘরসহ পৈতৃক বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে, ভেঙে গেছে। অনেকের পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে, আবার আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলহানি ঘটেছে অনেকের। বিআইডব্লিউটিএর ক্ষতিগ্রস্ত এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারির অনেক স্বজন মারাও গেছেন। আবার অনেকে বন্যাপরবর্তী সময়ে নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএতে কর্মরত দুর্গত এলাকার এসব ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারি তাদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নতুন করে নির্মাণ, ভেঙে পড়া বসতঘর মেরামত, ফসলহানির ধকল সামলানো, গবাদি পশু ক্রয় এবং রোগবালাই মোকাবেলা করতে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় তারা এখন দিশেহারা। পৈতৃক এলাকায় থাকা পরিবারের সদস্যসহ স্বজনদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা ও সন্তানদের পড়াশুনার টাকা যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। আত্মীয়-পরিজনসহ এলাকার পরিচিত-অপরিচিত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। ঋণ বা সাহায্যের জন্য কারও কাছে হাতপাতার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় মাসিক বেতন থেকে সুদসহ কিস্তির টাকা কর্তন করা হলে তারা চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়বেন।

বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতির শিকার নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারজন কর্মচারি এবং চাঁদপুর ও লক্ষীপুরের দু’জন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ অবস্থায় আমাদের বেতন থেকে ঋণের কিস্তি কর্তন করা অমানবিক হবে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ, অন্তত আগামী ৬ মাস কিস্তির টাকা কর্তন না করা।’ কিস্তি পরিশোধে এই ৬ মাস বিলম্বের জন্য বাড়তি সুদ আদায় না করার অনুরোধও জানান তারা। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এ বিষয়ে নৌ উপদেষ্টা, নৌসচিব ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানসহ সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কামনা করেন।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বেতন থেকে ঋণের মাসিক কিস্তির টাকা কর্তন (আদায়) স্থগিত রাখার সুযোগ নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঋণের টাকা নিয়মিত আদায় করে অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঋণ দিতে হয়। তাই তহবিল সচল রাখা দরকার। তবে গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করতে চাননি ওই কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজ হাসান খন্দকার বলেন, বিষয়টি মানবিক। ঋণগ্রহীতাদের দাবিও যৌক্তিক। বন্যায় ১২ জেলার সিংহভাগ মানুষ নানাভাবে ক্ষগ্রিস্ত হয়েছে। এছাড়া সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকেই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই কর্তৃপক্ষ চাইলে কয়েক মাসের জন্য কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/মি/ সু

মন্তব্য

Beta version