দেশের বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। দেশি ও আমদানি করা—উভয় প্রকারের পেঁয়াজের দামই এখন ১০০ টাকার ওপরে।
বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুই বছর আগে বাজারে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। তখন আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মানে, গত দুই বছরে পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
পেঁয়াজচাষি, আড়তদার ও আমদানিকারকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, চলতি বছর দেশে আমদানি করা পেঁয়াজ কম আসছে। আর মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ কিছু কারণে এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার কমবেশি থাকছে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকেরাও তুলনামূলক বাড়তি দামে তা বিক্রি করতে পেরেছেন।
তবে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরে কৃষকেরা এবার মোটামুটি লাভবান হয়েছেন। ফলে আগামী মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের ফলন ও উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে মৌসুম শেষ হলেও বাজারে এখনো দেশি পেঁয়াজই বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরে মৌসুমের শুরু থেকেই (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) দেশি পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। যেমন গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮৫ থেকে ১০০ টাকা। অথচ এক বছর আগে একই সময়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেত। টিসিবির হিসাবে, গত দুই বছরের ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৪০ থেকে ১৪৭ শতাংশ। গত জানুয়ারির পর কয়েক দফায় দাম বেড়ে যাওয়ার পর দেশি পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।
কেন বেড়েছে দামগত দুই বছর পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত দুই বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় টাকার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। যেমন ২০২২ সালে যেখানে এক ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যয় হতো ৯৪ টাকা, সেখানে পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯ টাকায়। আর বর্তমানে এক ডলারের পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি ডলারে দিতে হচ্ছে ১২০ টাকা; ক্ষেত্রবিশেষে এর চেয়েও বেশি দামে তাঁদের ডলার কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে দেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ। এর বাইরে মিসর আর তুরস্ক থেকেও কিছু পেঁয়াজ আসে। আমদানিকারকেরা জানান, সব দেশের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। ইকোনমিক টাইমস-এর খবর অনুসারে, ভারতে গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় গত বছরের আগস্ট থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত সরকার। এটিও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার আরেক বড় কারণ।
জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও পেঁয়াজ আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে এখন পেঁয়াজ আনতে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে দেশের বাজারে তা আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বাড়তি ব্যয়ের কারণে ভারত থেকে আমদানিও কম হচ্ছে।
আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা বা এর কাছাকাছি পড়ছে। এতে কৃষকেরাও দেশি পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও কম থাকলে দেশি পেঁয়াজও কম দামে পাওয়া যেত।
দেশে পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদনস্থল হিসেবে পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা সুপরিচিত। গত বছর এ দুই উপজেলায় পেঁয়াজগাছের মাথা শুকিয়ে যাওয়ায় ফলন অর্ধেকের কম হয়েছে। যে কারণে বেশির ভাগ চাষি লোকসানে পড়েন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছিল। তবে এবার বেশি লাভ পাচ্ছি। কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা লাভ থাকছে।’
জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর পাবনায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর তাঁরা এ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারায় কৃষকেরা এখন উৎসাহ বোধ করছেন। ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তখন দাম কমতে পারে।
সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী হাটের পেঁয়াজের আড়তদার রাজা হোসেন জানান, আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা বা এর কাছাকাছি পড়ছে। এতে কৃষকেরাও দেশি পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও কম থাকলে দেশি পেঁয়াজ আরও কম দামে পাওয়া যেত।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য