-->

সরকারের পালাবদলে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন

সেপ্টেম্বরে নতুন রেকর্ডের পথে দেশ

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
সরকারের পালাবদলে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন

রেমিট্যান্সের পালে ইতিবাচক হাওয়া লেগেছে। চলতি মাসের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মাসের প্রথম ৪ দিনে গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১১ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসার কথা ৩৩০ কোটি বা ৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে করোনাকালে এক মাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২৬০ কোটি ডলার। মূলত সরকারের পালাবদলে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে টানা ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। জুনে কমে ২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে যায়। আর জুলাইতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্সের গতি।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাড়তে থাকে রেমিট্যান্সের গতি। আগস্টের শুরুতে থমকে গেলেও পুরো মাসে তা ফের ২ বিলিয়ন (২২২ কোটি ডলার) ডলার ছাড়িয়ে যায়। চলতি সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে দেশ। চলতি মাস সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসছে। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই এসেছে প্রায় ১২ দশমিক ৮০ তোটি ডলার বা ১ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। যা দেশের জন্য এক নতুন রেকর্ড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম চার দিনে প্রায় ৪৪ কোটি (৪৩৬ মিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন গড়ে এসেছে প্রায় ১১ কোটি বা ১৩০৮ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের একই সময় সেপ্টেম্বরের প্রথম চার দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চার দিন সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি মাস সেপ্টেম্বরের শুরুর মতো এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারাবাহিতা থাকলে মাস শেষে সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা দেশের ইতিহাসে হবে নতুন এক রেকর্ড।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতেই যেভাবে রেমিট্যান্স আসার গতি রয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে নতুন রেকর্ড গড়বে দেশ। সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে রেমিট্যান্স। তবে এ জন্য আমাদের আরও কয়েক দিন দেখতে হবে। তবে রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। প্রবাসীদের কাছে পৌঁছানো আর ডলারের দরবৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এসব কারণে বাড়ছে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এটি এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসের পুরো সময়ে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। যা তার আগের বছরের (আগস্ট-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি এসেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এ ছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মাস মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version